Creative writing... আমি অঞ্জন,নিজস্ব লেখালেখির দুনিয়ায় স্বাগত। পাশে থাকুন
রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৯
বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৯
Nilanjan kothay? _part 3_ © Anjan Ghosh Roy 2019
©Anjan Ghosh Roy |
নীলাঞ্জন কোথায়? (Part 3)
©অঞ্জন ঘোষ রায়
দেড়টার ট্রেইন টা ধরতেই হবে ওকে।স্টেশন এর কাছাকাছি এসে গেছে নীলাঞ্জন।গলি রাস্তা দিয়ে সাবলীল ভাবে মুখ তুলে হেঁটে যাওয়া টা গভীর দুর্ঘটনার সম্ভাবনা।সবই চার পায়া দের কারুকাজ এর নমুনা এদিক ওদিক ছড়িয়ে আর কি!
নীলাঞ্জন এর কাছে ফোন নেই ।গত বছর একটা পুরনো স্মার্ট ফোন কেনে একজন এর কাছ থেকে,সেটা এখন দিনের বেশির ভাগ সময় প্যারালাইজড হয়ে পড়ে থাকে পড়ার টেবিলে।গতকাল সোশ্যাল মিডিয়া মারফত একটা দারুন বই এর খোঁজ পায় ,বই এর নাম "ফুরিয়েছে অসুখ?"লেখক এর নাম "অনিমেষ পাত্র"।লোকাল বই এর দোকান গুলোতে খোঁজ করে না পাওয়ায় আজ কলেজ স্ট্রিট গিয়ে নিজেই কিনে আনবে ঠিক করেছে,ওখানে ঠিক পেয়ে যাবে নিশ্চই।দাম কত ঠিক জানে না,আপাতত গত কয়েক মাসে জমানো তিনশো টাকা নিয়েই বেরিয়ে এসেছে।
টিকিট হাতে নিয়ে কাউন্টার এর পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে একটা মোটা সোটা লোক এর ধূমপান করার অদ্ভুত কায়দা টা লক্ষ্য করছে নীলাঞ্জন।লোকটার দুটো আঙ্গুল না থাকায় সিগারেট ধরেছে অন্যরকম ভাবে।ধোঁয়া টা কিভাবে হাওয়াতে মিশে যাচ্ছে সেটা দেখতে দেখতে নীলাঞ্জন নিজেও যেনো কোথায় একটা মিশে যাচ্ছিল।ঠিক তখনই ট্রেইন এর হুইসেল ওকে ফিরিয়ে আনে প্ল্যাটফর্ম এ।এভাবে ওকে অনেকেই ফিরিয়ে আনে,কখনো কুকুরের ডাক,কখনো কাকের,কখনো ফেরিওয়ালার, কখনো ট্রেইন এর,এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।
ট্রেইন এ উঠে দুদিকে দেখে , ডান দিকে শেষ কোনে বেশ ফাঁকা দেখে ওখানে গিয়ে বসে পড়ে,তবে জানলা দিয়ে ব্যাপক কড়া মাপ এর রোদ আসা তে ওকে একটু সরে আসতে হয়।কামরা টা বেশ ফাঁকা ফাঁকা।ওই দিকের কোণ এর সিট টা তে কেউ ভাত ঘুম দিচ্ছে,কেউ জানলার বাইরে চোখ রেখে কানে হেডফোন গুঁজে দিব্যি ঠোঁট মেলাচ্ছে।ওদিকে চারটে ছেলে দরজার সামনে দাড়িয়ে গুরুগম্ভীর কিছু টপিক নিয়ে আলোচনা করছে, ব্যাস আর কেউ সেরকম এদিক টা তে নেই।শুধু ট্রেইন এর হাতল গুলোর শব্দ কামরা টা কে মাতিয়ে রেখেছে।দুয়েক স্টেশন পেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ভিড় একটু বাড়ছে,কিন্তু নীলাঞ্জন এর এদিকটা কেউ তেমন আসতে গিয়েও আসছেনা।
নীলাঞ্জন এর পাশেই শুয়ে রয়েছে সিট এর ওপর একটা বড় বড় চুল দাড়ি ওয়ালা ,ময়লা গোছের জামা কাপড়,এবং এই গরমে মোটা কম্বল জাতীয় কিছু জড়িয়ে রাখা একটা সাধু মার্কা লোক।মাথার কাছে একটা বড় মোটা লাঠি রাখা আছে,আর একটা সিদুর মাখানো ভোঁতা ত্রিশূল।
কলেজ স্ট্রিট সেরকম পরিচিত এলাকা নয় নীলাঞ্জন এর কাছে,এর আগে একটা পত্রিকার সুবাদে গেছিল যদিও, মাত্র একবার,সেসব অতীত।নীলাঞ্জন আসলে অনেকটা সমসাময়িক মানুষ জন এর থেকে বেশ পিছিয়ে পড়া একটা ভাবনাময় মানুষ। বন্ধু বান্ধব তেমন নেই খুব একটা সেকারণেই।
টালিগঞ্জ এ ট্রেইন থামতেই একটা মেয়ে উঠে নীলাঞ্জন এর উল্টো দিকের সিট এ এসে বসে,আর ওদিকের সিট এ দুজন বয়স্ক লোক এসে বসেন।নীলাঞ্জন একটু ইতস্তত বোধ করলেও, কিছুতেই জানলার বাইরে চোখ রাখতে পারছিল না।বারবার মেয়ে টির দিকে তার চোখ বাবাজীবন যেতে ই থাকে,কিন্তু কেন! আহামরি সুন্দরী তো নয়,তবে একটা ইউনিক ব্যাপার রয়েছে,আর সেটা আসলে কি,সেটাই বোঝার চেষ্টায় রয়েছে নীলাঞ্জন।জানলার দিকে তাকিয়ে রয়েছে মেয়ে টি, হাতে রিস্ট এর ওখানে একটা ফিনফিনে ট্যাটু ,স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না কারণ অর্ধেক টা ঢেকে রয়েছে ওর হাতে থাকা সাইড ব্যাগ এর জন্য।ট্যাটুর দিকে চোখ রাখতে গিয়ে পাশেই ব্যাগ থেকে বেরিয়ে থাকা একটা বই এর অংশ দেখতে পায়,এবং লেখক এর নাম লেখা রয়েছে "অনিমেষ" পদবী টা দেখা যাচ্ছে না।
কিন্তু এই বইটি তো লাল রং এর,নীলাঞ্জন যে বইটি কিনতে যাচ্ছে আর কি,সেটা তো কালো রং এর কভার।এটা কি অনিমেষ পাত্র ই তবে!
মেয়ে টি একভাবে বসে রয়েছে,জানলার বাইরে তাকিয়ে।ট্রেইন এর দুলুনি তে একটু দুলছে মাত্র।নীলাঞ্জন ভাবছে ওর যে বই টা দরকার সেটার ব্যাপারে মেয়ে টি যদি কোনো সাহায্য করতে পারে।কিন্তু কথা কি ভাবে শুরু করবে সেটাই বুঝতে পারছেনা।
অনেকক্ষন একভাবে তাকিয়ে থাকায় মেয়ে টি এবার সেটা নোটিশ করে,এবং নীলাঞ্জন এর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে "কিছু বলবেন কি?" নীলাঞ্জন ঘাবড়ে গেলেও এই সুযোগ টা হাতছাড়া না করে,জানতে চায় বই টির ব্যাপারে। কথায় কথায় এটা জানতে পারে মেয়ে টি ও ওই বই টি কিনতেই কলেজ স্ট্রীট যাচ্ছে।নীলাঞ্জন তার কাছে জানতে চায়,যদি তাকে বই টা পাওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করে,কারণ ও এলাকা টা সম্পর্কে সেরকম অবগত নয়।
মেয়ে টি একটু চুপ থেকে তারপর বলে,ঠিক আছে,চলো,প্রব্লেম নেই।
নীলাঞ্জন আপনি থেকে তুমিতে তে স্থানান্তর এ একটু ভাবতে বসে।এভাবেই মানুষ পরিচিত হয়! কেউ আমরা চিনি না একে অপরকে,তবু ঘটনা চক্রে আমরা পরিচিত হই।আমরা ঘনিষ্ঠ হই,কাছে আসি,সময় অনুযায়ী সরেও যাই,দূরেও যাই, ফুরিয়েও যাই।
এসব ভাবতে ভাবতে কখন ট্রেইন প্ল্যাটফর্মে এসে দাড়িয়েছে,আর মেয়ে টি কতবার যে ডেকেছে সেটা বুঝতে পারেনি।শেষবার কানে এলো,"কি হল,উঠবে তো! এসে গেছি তো,নামতে হবে"।
নীলাঞ্জন চমকে উঠে বলে,"ওহ এসে গেছি না!" ততক্ষণ ট্রেইন পুরো ফাঁকা হয়ে গেছে।দুজন নেমে হাঁটতে থাকে।যতক্ষণ না পৌঁছায় ততক্ষণ অনেক কথা বলতে থাকে ওদিকের মানুষ টা,আর নীলাঞ্জন খানিক শুনতে থাকে,খানিক না শোনা। ভিড় এর মধ্যে অনেকবার নীলাঞ্জন এর হাত, মেয়ে টির হাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে চলে যেতে থাকে।নীলাঞ্জন অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছে বারবার,একটা ঠেলা রিক্সা পিছন দিক থেকে এসে সরতে বলছিল , মেয়ে টি ওর হাত ধরে টেনে ফুটপাথ এ হাঁটার জন্য বলে।এভাবে হাঁটতে দেখে একটু এমন ভাবে বকে দিল নীলাঞ্জন কে,যেন অনেক দিন এর পরিচিত।নীলাঞ্জন হঠাৎ থেমে গিয়ে মুখ টা নামিয়ে জিজ্ঞেস করে ,তোমার নাম টা জানিনা আমি,বলবে?
মেয়ে টি বলল,"আমিও তো জানিনা তোমার নাম,এতে কিছু কি আদৌ যায় আসে? তাড়া তাড়ি এগোও ,বইটা কিনতে হবে তো! সামনেই।এসে গেছি।"
বইটা কিনে ঠিক তেমনি অন্যমনস্ক হয়ে কথা কিছু শোনা কিছু না শোনা করে ফিরতি ট্রেইন এ উঠে বসে।ততক্ষণ এ বিকেল চার টের ও বেশি। নীলাঞ্জন কে অনেকবার বলার পরেও কিছু ই খেতে চায়নি।বলেছে খাওয়ার ইচ্ছে নেই।আসল ব্যাপার টা নীলাঞ্জন সামনে আনেনি।বইটার দাম ছিল ২৮০/- ।আর ট্রেইন ভাড়া দিয়ে পকেট খালি।প্রচণ্ড ক্ষিদে পেলেও টাকা না থাকায় সেটা লুকিয়ে নিতে হয়েছে। মেয়ে টি কিছুটা আন্দাজ করতে পারলেও স্বল্প সময় পরিচিত হওয়ায় কিছুই করার ছিল না।
ট্রেইন ছাড়ল।নীলাঞ্জন আরেকবার জিজ্ঞেস করবে ভেবেও করল না,ওর ইচ্ছে করছিল মেয়ে টি র সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে।কিন্তু প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে সেটা ভেবে গুটিয়ে থেকে গেল।ট্রেইন এখন ব্যাপক ভির।জানলার দুদিকে পরস্পর মুখোমুখি বসে।কোনো কথা নেই।মাঝে মাঝে চোখ পড়লেও একটু মাখা মাখা হাসি তারপর আবার চারটে চোখ জানলার বাইরে।আর ৫ টা স্টেশন ক্রস করলেই মেয়ে টি কে নেমে যেতে হবে।এখানে দুজনের মধ্যেই একটা খারাপ লাগা কাজ করছিল।কার মধ্যে বেশি সেটা বলা খুব কঠিন।
এরই মধ্যে মেয়ে টি নীলাঞ্জন কে ডেকে জানতে চায় "আকাশ টা এমন কেন?" নীলাঞ্জন অনেকক্ষন আগেই খেয়াল করেছে এই মুহূর্তে আকাশ এ অনেক গুলো রং এর সমাবেশ তৈরি হয়েছে।মেঘ গুলো অনেকটা কোনো একা ফুটপাথ এর বাচ্চার মাথায় এলোমেলো থাকা চুল এর মতন।নীলাঞ্জন চুপ। মেয়ে টি এবার জানতে চায়,"কি হলো উত্তর নেই ?"। নীলাঞ্জন বললো" আছে।বলছি।" শোনো,-
"আকাশ টা আজ এরকম কারণ এই মুহূর্তে একটা ছেলে একটা মেয়ের অনেকটা কাছাকাছি এসে গল্প করছে , আজ রাতে ঠিক কত গুলো জোনাকী একসাথে প্রেম করবে সেই নিয়ে দুজনেই ভিতর ভিতর আলাপ জমিয়েছে।আকাশ টা এরকম কারণ মাঠ এর মাঝখানে একটা ঝিল অপেক্ষায় থাকবে কখন একটা চাঁদ সশরীরে হাজির হবে টসটসে ঠাণ্ডা ছায়া দিতে ।আকাশ টা এরকম কারণ ইলেকট্রিক এর তার গুলো মানুষ এর মুখ এর বিকৃতি দেখে দেখে বিভৎস ভাবে ক্লান্ত,তারা চায় এখন একটু লাল মুখো মেঘ দেখবে আকাশে। আকাশ টা তাই এরকম।ধরে নাও, বিশেষ করে,তোমার ভালো লাগবে বলেই আকাশটা আজ এরকম ভাবে সেজে এসেছে!"
নীলাঞ্জন কথা শেষ করে জানলার দিকে তাকায় যথারীতি আগের মতোই।
মেয়ে টি একভাবে নীলাঞ্জন এর দিকে তাকিয়ে থাকে । অবাক হয় একটু।
এর পরেই টলিগঞ্জ । মেয়ে টি নেমে যাবে।আর কি দেখা হবে কখনো? কেনোই বা হবে? আর তো কোনো দরকার নেই।ও কেউ নয়।একটা কৃতজ্ঞতা স্বীকার জাস্ট,বইটা দরকার ছিল ,সেটা কিনতে সাহায্য করেছে।ব্যাস আর তো কোনো ইস্যু নেই।নীলাঞ্জন নিজে নিজে নিজেকে ই বলছে।
ট্রেইন টলিগঞ্জ ঢুকছে এবার। মেয়ে টি উঠে দাড়ায়।দুজন এর চোখ দুজন এর দিকে।ওপাশ থেকে বলল "এলাম"।নীলাঞ্জন ঘাড় নেড়ে বলল "ok"। জানলার দিকে মুখ করে নিল আবার।ট্রেইন সিগন্যাল পায়নি এখনো দাড়িয়ে আছে। মেয়ে টি প্ল্যাটফর্মে নেমে নীলাঞ্জন এর জানলার কাছে এসে দাড়াল।নীলাঞ্জন জানতে চাইল "কিছু বলার আছে ?? জানলার ওপার থেকে আরেকটা প্রশ্ন এলো- "আবার কখনো দেখা হবে?" নীলাঞ্জন বলল "হবে হয়তো"।
ট্রেইন ছাড়ল।দুরত্ব টা বাড়ছে।মানুষ দুটো পরস্পরের দূরে সরছে এবার।একটা সময় আর কিচ্ছু নেই।ট্রেইন এর গাদাগাদি এতক্ষন পর কি প্রচণ্ড তেতো লাগছে,এতক্ষন টের পায়নি নীলাঞ্জন।আকাশ টা তখনও একইরকম আছে,এবার একটু অন্ধকার জোট বেঁধেছে।সেভাবে না দেখতে পাওয়া রিস্ট এর ফিনফিনে ট্যাটু টা চোখে ভাসছে।আর নীলাঞ্জন ভিতর ভিতর একটা কথা কয়েক বার রিপিট করতে থাকল -
"তুমি তোমার নাম দিলে না"
"তুমি আমার নাম নিলে না"।।
© অঞ্জন ঘোষ রায়
(পরবর্তী আসছে)
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)
কবি এবং কেরানী কবি
মহৎ কবি কখনো ডায়েরি লিখবেন না, এটা আপনাকে বুঝতে হবে। তার জীবন কোন সময়ের ভাংচুর এর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে নাকি সুখের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে,কবি যদি...
-
তুমি কে আমি কে , রাজাকার রাজাকার কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার - আমি অঞ্জন ঘোষ রায় , স্যালুট জানাই তোমাদের , বাংলাদেশের সকল আন্দো...
-
সাইরেন বিছিয়ে রাখা শীতল মাদুর, ঘুঘু ডাকুক, নিচে ধুলোর কুঠার রাখা আছে। চাষের জমি দখলের অভিযোগে চাষী দের কারাদণ্ড, ওদিকে কুমীর রুমাল কিনে...
-
ওকে ভালবাসি,ওকে অন্য কেউ জড়িয়ে ধরে রেখেছে, অধিকার করে নিয়েছে ওর উপর, ও আমার বিবাহিত স্ত্রী নয়, ও আমার প্রেমিকার ঊর্ধ্বে কেউ,তার চেয়েও...