বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৯

একটি কথোপকথন - চারাগাছ /লিখেছেন - নামাবলী ও অঞ্জন ঘোষ রায়/২০১৯



কথোপকথন - চারাগাছ
দুটি চরিত্র - চারাগাছ ও প্রেমিক
লেখায় - নামাবলী এবং অঞ্জন ঘোষ রায়।

_এই যে উপত্যকা!তোমার জন্য। পছন্দ?

_তা পছন্দ,বেশ।তবে এক কাজ করো,
গাছ লাগিয়ে দিও দুটো,বুঝলে!
অক্সিজেনটা কমে গ্যাছে, সবুজের শান্তিটাও উধাও🙂

_হুম,হবে হবে। গাছ লাগানো হবে,চিন্তা নেই।

_ বৃক্ষরোপনটা কিন্তু শুধু পরিবেশ দিবসেই সীমাবদ্ধ!

_আমি তো সবসময় গতানুগতিক এর বিরুদ্ধে চলি।তাই ওই দিন টা বাদে, সারা বছর ই ওই কাজটা করতে পারি ।তবে চারাগাছ , সম্মতি দিলে।

_চারাটা বড়ো করতে পারবে?

_চারা টা বড় করা যায়,যদি তার নিজের ইচ্ছা থাকে । নইলে একার চেষ্টায় কত ই বা বাড়ানো যায়। অধিকার বোধ তখন জোর খাটানোর দিকে এগিয়ে যাবে।আমি জোর খাটাতে চাই না যে।

_বেড়া দিয়ে ঘিরে দেবো!
সূর্যকেও বলবো স্নেহের চোখে দেখতে
বৃষ্টিকেও বলা আছে হালকা স্নান করাতে

_ ওহ,তাহলে তো আর কোনো অসুবিধে দেখি না।চারা নির্দ্বিধায় বাড়তে পারবে। খেয়াল রাখব।নাহ্,রাখব না,চেষ্টা করব।আসলে নিজেরই বা খেয়াল রাখি কই!

_খেয়ালে কি চারা বাড়ে!
চারা বেখেয়াল চায় একটু।অবহেলা চায়,উপেক্ষা চায়
তবে না শক্ত হবে,শিকড় টা গভীরে যেতে হবে তো!

_ তবে তাই হোক! চারা যা চাইবে সেটা দিয়েই হবে।
আমি বরং আলপথ ধরে হাঁটব।বনলতার স্বপ্ন দেখব।সাদা বক গুনব।গান গাইব, যে গান এর কথা জানা নেই।
মাঝে মাঝে ক্লান্ত হলে চারার পাশে এসে জিজ্ঞেস করব,, কেমন আছো?
মন খারাপ হলে,যেচে জানতে চাইব, আমি যে ভালো নেই, তা বুঝতে পারো??
চারা বলবে,, কেনো ভালো নেই??
আমি বলব,, তোমার কাছে থাকা হয় না যে!
চারা বলবে- যাহ,মরণ দশা!

_ চারা আবার উতলা হবে জিজ্ঞেস করবে,
-এই বলোনা সত্যি ভালো নেই?
-নাহ, সত্যিই।

-এত অধৈর্য্য ক্যানো তুমি! তুমি পাশে থাকলে স্বপ্ন সাহস পায়...তুমি আজও আছো আমি জানি,তুমি স্মৃতিতে আমাকে খোঁজো...আমি স্মৃতিতে সাদা কালো কিন্তু এখন আমি রঙিন। এতদিন পর এতখানি আলপথ হাঁটতে গিয়ে বনলতা খুঁজেছিলে কিন্তু জানতেইনা আমিই মাধবীলতা গন্ধ মেখেছিলাম...

_আমি বলব,
তা কি জানতাম না ভেবেছ? নাকি জানি না?.
সবটা বুঝি,জানি ।কিছু করার নেই।আসলে আমার ভালো লাগে আকাশ দেখে দিন কাটাতে।পথে পথে ঘুরে ,ঘাস পাড়িয়ে যেতে,জল এর নিচের দিকে তাকাতে পুকুরের, ভালো লাগে। একটা শান্তি পাই।কিন্তু যখনই খেঁয়াল হয়,তুমি অনেকটা দূরে এই খানে,চুপ করে বসে আছো,একা একা। আমার কিচ্ছু ভালো লাগে না। বিশ্বাস করো।আমার ইচ্ছে করে তছনছ করে দি সব।তোমার কাছে এসে বসি,জিজ্ঞেস করি,
আজ শরীর টা ভালো আছে তো?
তোমার গতকাল জ্বর ছিল।আমাকে জানাওনি। তোমার কপাল ছুয়ে মন টা খারাপ হতে হতে ভালো হয় গেছিল,তুমি যখন আমার আঙ্গুল  ছুয়ে দিয়ে বলেছিল।যাও তুমি আকাশ দেখে এসো।

__-ওটা তো আমার অভিমান ছিল...!!
ওহ তুমি তো আবার অভিমান ভাঙাওনা,তুমি তো অপেক্ষা করো!
জানো আমিও অপেক্ষা করেছিলাম, মাধবিলতাটাও বেহায়া,শুকিয়েই গ্যালো।

-না সেরকম না , আকাশে আমি নৌকা দেখি তুমি দেখেছো? আমিওই শান্তিটার কথা বললাম না! ওটা আমি তোমার মধ্যে খুঁজতে গেছিলাম; কিন্তু, কিন্তু তুমি বড্ড নবীন, খুব ছটফটে।
-আচ্ছা তবে আজ থেকে শান্ত হলাম,কথা রাখার আগে সেটাকে বাড়তে দিতে নেই জানো তো?
চারার ইচ্ছা হয় তোমাকে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু ততক্ষণে তুমি অনেকখানি দূরে,আলের ওপর দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছো, রোদে তোমার চারার কষ্ট হচ্ছে পুড়ে যাচ্ছে সে, তুমি বেখেয়াল।

_ আমাকে আর অপরাধী কোরো না । কাদতে ইচ্ছে করছে।
আমি এমনই ,কি করতে পারি! আমি তোমাকে ভালোবাসি এটা তুমিও জানো,আমিও জানি।
এই বেখেয়াল পণা টা আমার দূরে রাখতে হবে।কিন্তু তুমি কি এটা জাননা যে বেখেয়ালি একজন কবির শক্তির উৎস।সেটা দূরে সরালে আমি তো কিচ্ছু নই! তখন আমায় চিনতে পারবে তো? বলো পারবে? তুমি চাও  আমি শুধু তোমার ছায়ায় বসে থাকি? গোটা পৃথিবী কে যে আমার প্রয়োজন ।তুমি তো বোঝ!
আমি তোমাকে অনাদরে রেখেছি । আমি স্বীকার করি।তবে সম্পূর্ণ দায় কি শুধু আমার?

_: তুমি ভাবলে কি আমি কবির প্রেয়সী? আমি তোমার হতে চেয়েছি, সবুজ সাজ ছেড়ে রক্তস্রাবে সেজেছি।
ভালবাসলেই কি হয়? বাঁচাতে পারছো তুমি আমাকে? সূর্য আর বর্ষাকে বলেই খালাস তারা যে আমাকে নগ্ন অবহেলায় রাখে সেটাও তো জানোনা। অভিযোগের পোশাকে অপরাধী হতে তোমার দ্বিধা নেই অথচ ভালোবাসায় তোমার দ্বন্দ্ব। কে বলে ভালোবাসা আটকে রাখে বেঁধে রাখে!
ভালোবাসা তো ছায়ায় বাঁধেনা ভালোবাসা বাঁচতে দেয়,পারবে বাঁচতে? পারবে ? বলো, পারবে?
পৃথিবী জুড়ে আমার শিকড় ছড়িয়ে যাচ্ছে সেটা ভুলে যাও কিভাবে! এত বোকা তুমি, হ্যাঁ গ এতটা!

__ ঠিক বলেছ। আমি বোকা।
আমি তোমাকে  এভাবে বাঁচিয়ে রাখব কখনোই ভাবিনি।কিন্তু রেখেছি। বুঝতেই পারিনি,তোমার শিকড় আমাদের পৃথিবী কে জড়িয়ে ধরছে।বুঝতে পারিনি সূর্য তোমাকে নগ্ন করে রোজ আগুন পোহায়।
আমি শুধু হা করে আকাশ দেখে গেছি,পথিক এর পথ চিনে গেছি,
তোমাকে এভাবে বাঁচিয়ে আমি অজান্তেই নিজেকে অপমান করেছি।তোমাকে করেছি।আমাদের সম্পর্ক কে করেছি।
আত্ম গ্লানি বিষ এর থেকেও ঘন অন্ধকার হয়। তুমি জানো কি? নিশ্চই জানো।
আমার উপায় নেই আর কোনো। আমি ভালো নেই,তুমি নেই,,,ভালো থাকা যায় না আর । আমি দিক হারিয়েছি। এই নাও একটা ধারালো কিছু আছে।নিজেকে শেষ করো। আমাকে শাস্তি দাও
উপায় নেই,তারপর দেখি নিজেকে কিভাবে ক্ষমা করি।

__ নাহ্,না,না..."শেষে" আমি প্রাণ পাইনা।
তুমি ক্ষুদ্র মানুষ,আমার উদ্দেশ্য মহৎ!
তুমি আকাশ দেখেছো নাকি আকাশের নগ্নতা উপভোগ করেছো? কামুক তুমি,কামুক!
ভর্ৎসনা করবোনা তোমাকে,তুমি আমাকে ভালোবেসেছো, জন্মের প্রথম কাপড় দিয়েছো।
এই আলের ধরে যে জমিটা আছে ওখানে সরষের চাষ,ওই হলুদ রংটা আমাকে বসন্ত দিয়েছে,ওকে আমি ভুলি ক্যামনে?
তোমার উপায় তোমার বিষ,গিলতে তো পারবেনা তুমি।শিকড়ের রসে বাঁচিয়ে রাখবো তোমাকে,কিন্তু,কিন্তু তুমি মিজেকে রোজ দ্যাখো আয়নায়।এই একটুকর কাঁচ দিলাম,পারদ টা খুঁজে আনো। এতে মুখ দেখো,সূর্যের লালসা দেখো,বৃষ্টির রাক্ষুসে কামনা দেখো। পঙ্কিল তুমি! পঙ্কিল

_ আমি হেরে গেছি গো,
হেরে গেছি। আমার সমস্ত কবিতা বৃথা।
নষ্ট কবিতা লিখে গেছি দিনের পর দিন।
আমি স্বীকার করি,আকাশ এর উদার খোলা শরীর আমাকে কামুক করে তুলেছে।আমি বারবার ছুটে গেছি তাই।কিন্তু আমি কবিতা লিখেছি তা থেকে।সে কবিতা প্রজন্ম ভালোবাসছে।জানো আগামী সপ্তায় আমাকে পুরস্কার দেওয়া হবে তার জন্য।আমি পুরস্কৃত হব ।
কিন্তু, কিন্তু এসব ,আর
আমার চাইনা। যেখানে তোমার ভিতর আমার অবস্থান এমন সংকটে। আমার এসবে কি লাভ!
আমি কামুক,আমি পঙ্কিল।
আমি চরিত্রহীন,দায়িত্ব হীন,,
শেষ অনুরোধ একটিবার ,
আমাকে তোমার কাছে বসতে দেবে
কিছুক্ষণ???
তারপর এই জন্মে আমার মুখ আর দেখাব না।কথা দিলাম

__: বসবে,তুমি?
তাহলে মাধবীযতটা জড়িয়ে আসি ক্যামন?
কিন্তু তুমি কি জানো, মুখ না দেখালেও ওই যে তোমার মনটা ওটার বীজ আমার শিকড়ে জিন রেখে দিয়েছে নিজের?
আকাশের শরীরে তুমি উষ্ণতা খুঁজেছিলে,কিন্তু তুমি শীতলতা পেয়েছো। তাই বলেই কি আজ আবার ওম পেতে, উষ্ণতার লোভ জেগে উঠেছে তোমার?
তোমার কবিতা,তার না আছে ছন্দ না আছে অসাধারণত্ব। তুমি গদ্যের মতোই মধ্যবিত্ত।
আচ্ছা ওই উপহারদাতা ওরা জানে,তোমার কবিতায় চরিত্র বলে কিছু নেই? সবটা অন্ধকার গলির হিংস্র পাগল কুকুরটার কামুক আচরণের কল্পনা?

__ তুমি বারবার আমায় বিধছ।
আমার কষ্ট হচ্ছে বিশ্বাস করো।
তুমি ভুল বুঝলে আমার কষ্ট হয়।বাইরেটা দেখে কীভাবে তুমি বিচার করছ।
তোমারই বা দোষ কি!
আমার অসহায়তা আমি বলি কাকে!
আমি ওম পেতে আসিনি।
আমি আকাশের বুকেও যাব না ।
বিশ্বাস করো এটুকু,ইচ্ছে হলে।
আমি অনেক দূরে যাব,সেখানে কোনো আকাশ নেই,তুমি নেই শুধু অন্ধকার।
আর কোনো রাস্তা নেই।এরপরে ও বেঁচে থাকা আমার হয় না।আমি মুক্তি চাই।
থাক আমার আবাল কবিতা,থাক আমার পুরস্কার।
মৃত্যুর থেকে বড় পুরস্কার আর কিছু হয় না।
আমি তবে যাই।

_: দেখেছো তো ক্যানো তোমাকে ঘেন্না হয় আমার আজকাল?
তুমি যেতে চাও,মুক্তি চাও,তবে তুমি আমাকে চাওনা।
তুমি একটা স্বার্থপর,নিজের টা নাকি তুমি ভালো বোঝো, এতসিনে বুঝেছি কোনটা তোমার ভালো বুঝে নেওয়া।
উন্মাদ যৌবনে মেতেছো তুমি,নবীনকে অপক্ক ভাবতে ভাবতে ভুলেই গ্যাছো শিকড় শক্ত হচ্ছে।
রাস্তা আছে ওই আলপথ যেখানে তুমি সাদা বক দেখো,সেই সাদা বক কে ডেকো সে তোমাকে বুকের বদলে একখানি উঠান দেবে।
নগ্নতার বদলে,তোমাকে খানিক আমার গন্ধ দেবে,বুনো গন্ধ।
নেশা করেছো কখনো? আমার নেশা? কাছে টানার মতো সবুজ নেশা?
তুমি বীর ভাব নিজেকে,পুরুষ ভাবো নিজেকে অথচ হৃদয় ভাবনি নিজেকে।
হৃদয় ভেবে দেখো তোমার ফুটপাথ কবিতায় শব্দ আসবে দেখো,পুরস্কারের লোভে না ছুটে জিবিনের লোভে ছোটো।

__ দামী কথা বললে।
তুমি যা খুশি বলতে পারো। আমি তোমাকে চাই,মনে প্রাণে চাই
কিন্তু সে মুখ আমার নেই্,আমি রাখিনি
।আমি আর কিছুই চাইনা।আর লাভ নেই কোনো ভাবেই আমি যা ঠিক করি সেটাই করে থাকি।তুমি জানো
তোমায় ভালো রাখতে পারিনি ঠিক কথা।
কিন্তু তুমি হয়ত জাননা,তুমি পড়ে ছিলে একটা নোংরা পিশাচ এর ঘরে।তোমার জ্ঞান ছিল না। আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে নিজেকে খালি করে তার পরিবর্তে তোমাকে এখানে এনে প্রাণ দিয়েছি
এই উপত্যকা শুধু তোমার জন্যেই বানিয়েছি।শুধু তোমার কথা ভেবে।
আমি যা ঠিক করেছিলাম,করেছি ।
কেউ আটকাতে পারেনি।
এবারও তাই হবে। আর পিছনে তাকানোর রাস্তা নেই।যেতে দাও।অনুমতি দাও ,আমি যাই।

_বেশ তবে যাও,তুমি আমাকে চাও তবে ভালোবাসো না।
তুমি নিজের অজান্তেই চাই চাই রব তোলো,আর সেখানেও তুমি তোমার পাটিগণিতকে আনো।তুমি হয়তো ভুল নও,ভুল আমার ভাবনার দিক,ভুল আমার চিন্তা।
আমাকে ভালো রাখার আগে একটিবার নিজেকে তো ভালো রাখতে! আমার সত্যিই উপত্যকা দরকার ছিলোনা। একচিলতে জমি আনলেই হতো, আমাকে সুখ দিচ্ছ,অধিকার দিচ্ছ ভেবে তুমি উপত্যকা কে ন্যাড়া করে দিয়েছো,আমাকে রানী করতে গিয়ে তুমি রাজ্য উজাড় করেছ। সেই রাজ্যে শুধু তোমার চরিত্রের নোংরা গন্ধ পাই আমি।
তোমাকে ছেড়ে থাকতে আমি শিখে গেছি,এই নবীনও শিখে গ্যাছে,চলে যাও তুমি , চলে যাও...নিজেকে উজাড় করে তোমার অক্সিজেন যোগান আমি দিয়ে দেবো। যাও! যাও!

_ বেশ। বেশ।
এটাই হবার ছিল তবে।
কখনো দূরে গিয়েও ভালোবাসা যায়,তোমাকে নিস্তার দেওয়া টা আমার কর্তব্য।আমার মনন এর কর্তব্য। আমি আর ভাবছিনা কিছু।শুধু ভাবছি,তুমি দিনে দিনে বেড়ে উঠবে,সেখানে কত কেউ আসবে,তুমি কাউকে তো ঠিকই জুড়ে নেবে।
তার কাছে তার বুকে মুখ লুকিয়ে আমার গল্প করবে, আমার চরিত্র কতটা নোংরা ছিল।তোমার ঘেন্না হয়,গোটা সংসার এর কাছে তুমি রটিয়ে দেবে,প্রত্যেকে র ভিতরে একটা কথা ছড়িয়ে যাবে, আমি কতটা নোংরা চরিত্রের ছিলাম।
আমি তোমার কথা ভেবে এই উপত্যকা বানালাম। যা তোমার দরকারি নয়।আমি যা কিছু করেছি তোমার জন্য,সেসব আজ আর বলতে চাইনা,যাওয়ার বেলায়।বলতে নেই।কিন্তু যা করেছি সত্যি কি কিছুই দরকার নেই?
আমার প্রয়োজন কি ফুরিয়ে গেছে পুরোপুরি?
তুমি ভালো থাকবে তো? ভালো থাকবে?

__হওয়ার ছিলো কি ছিলোনা সেটা ঠিক করার আমি কে? তুমিই বা কে!
দূরে গিয়ে ভালোবাসতে হয়না আলাদা করে
ভালোবাসলে এমনিই বাসা যায়...
আমি বেড়ে উঠবো উপত্যকাটায় ছড়িয়ে যাবে আমার সন্তান, ছায়াতে কতজনই আসবে,কতজন আঁচড়াবে আমাকে।
কিন্তু তোমার মতন?কিংবা তোমার চেয়েও ভালো কেউ এলে আমি মুখ ফিরিয়েই রাখবো,আমার হৃৎস্পন্দন তোমার বুকেই শান্তি পায়। তুমি আজও তা বোঝোনা, নাকি বুঝতে চাওনা!
আমি না,আমি কোনোদিন তোমার মধ্যে আমার দরকারকে খুঁজিনি জানতো! প্রয়োজনে তোমাকে ডাকিনি,মনে মনে প্রত্যাশা করে গেছি।
ভালো থাকা আমার জন্যে নয়,সে তুমি জানোই। আমি সবার ভার কাঁধে নিয়ে চলি, সবার ভালো থাকা আমার, কিন্তু আমার ভালোথাকা কারোর নয়।
আর একটা কথাও বোলো না ,যাও তুমি।
_ঠিক আছে,চললাম।।
কুয়াশায় ঢেকে গেল গোটা উপত্যকা,প্রেমিক মিলিয়ে গেল আস্তে আস্তে করে। চারা গাছ মৃতপ্রায় ,শুকনো ঠোঁট।
লেখায় -
নামাবলী/ অঞ্জন ঘোষ রায়।

মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০১৯

স্নিগ্ধার জন্যে লেখা চিঠি | © অঞ্জন ঘোষ রায় | 2019 | anjan ghosh Roy poetry



(স্নিগ্ধার জন্যে লেখা চিঠি)

চিঠি আমি তোর জন্য কখনো লিখিনি স্নিগ্ধা। তবু লিখতে হবে । দরকার টা কি ছিল এমন আবদার এর হঠাৎ?যাই হোক,আমি চেষ্টা করতে পারি বড়জোর।তুই কার্সিয়াং এ বসে অপেক্ষা করবি বলেছিস এই চিঠির।
এরকমই অপেক্ষায় আমি একসময় তোকে হারিয়ে ছিলাম।আমি ই হারিয়েছিলাম, নাকি তুই আমাকে!সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারিনা এখনো।
এই বার এর অপেক্ষায় আমি তোকে ফেরাবনা,সেজন্যেই এখন লিখতে বসা,তোর জন্য লিখব।
পৌনে একটা বাজে,আজ খাওয়া হয়নি তেমন কিছু রাতে।ভাড়া বাড়িতে থাকি,মাসমাইনের অর্ধেক টা দিয়ে দিতে হয় সেখানেই।মাসের শেষ দুয়েকদিন এমন ভাবেই চলে, হাওয়া আর জল খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ি।এসব কথা তোকে বলে কাজ নেই স্নিগ্ধা,তুই ভালই আছিস,আমিও।
জানি তবু প্রায় রোজ রাতেই তোর ঘুম এর বরাদ্দ সময়ের ভাগ আমাকে দিস,রোজ ঘর থেকে পালিয়ে আসিস রাত হলে এই বাবুইঘাটা য়।
আমি তো দোতলার এই ঘরের জানলা দিয়ে রোজ চাঁদ দেখি,অমাবস্যায় খুব একা লাগে,আকাশ টা অন্ধকার,ফাঁকা লাগে।
আমি ভেবে নিই তুই দাড়িয়ে আছিস ল্যাম্পোস্ট এর নিচে, তোর ছায়া পড়েছে শিবু মিত্রর গেটের সামনে।একটু পরেই চলে যাবি।
রোজ আসিস তুই কার্শিয়াং থেকে এখানে,আমার খোজ নিতে,এই ভেবে ভালো থাকি।
পড়ে খেয়াল হয় ছায়াটা মিটার ঘর এর পিছনে থাকা শুকনো ডুমুর গাছ এর।
সতেরো টা বছর কেটে গেছে,তোকে দেখিনি আমি,জানিও না কেমন আছিস।ফেসবুক  এ আমি লেখালেখি করি অল্প স্বল্প,পরশু দিন এর কবিতায় তোর স্নিগ্ধা নাম এর মন্তব্য আমাকে তোর হদিস দ্যায়।
আর তার পর নতুন করে আলাপ । তোর আবদার,চিঠি লিখতেই হবে,আমি লিখছি।
অনেক কথা জমে আছে,অনেক অনুভূতি,প্রেম,অভিমান,ব্যর্থতা,কষ্ট।এভাবে দুপাতায় কিভাবে শেষ হয়!
তবু লিখছি।আমি কাদছি।অনেকদিন পর।তোর বাবার দেখা ছেলের কাছে আমি হেরে গেছি,জিতে গেছি নিজের কাছে ,কবিতা লেখা ছাড়িনি,লাভ  হয় না কিছুই,তাও,তোকে ভালবাসি এখনো ।
সন্তোষ লেন এ চিরকাল দাড়িয়ে থাকা ম্যাটাডোর টার আড়ালে সেই সন্ধ্যে টা মনে আছে তোর? আমি এখনো যাই ,যখন তোকে মনে পড়ে খুব।তোর  সেভাবে আমার কথা মনে পড়ে কখনো? কিজানি হয়ত বা।আমি ভালো আছি,ফাটা মেঝে,ছেড়া তোষক,ভাঙা চৌকি,পুরোনো গিটার, ডাইরি,ফ্যাকাশে জামা,খুচরো,সিলিং চুইয়ে জল,ঘরে ঢুকে আসা জোনাকী,আর জানলায় চাঁদ সব কিছু নিয়ে আমি ভালো আছি।
স্নিগ্ধা,তুই ও ভালো থাকিস,জানি ভালো আছিস,ভালো থাক।
©অঞ্জন ঘোষ রায়

Connect with anjan ghosh roy.


রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৯

কাব্যিক|| পার্ট ১|| মুক্তগদ্য|| © Anjan Ghosh Roy 2019

কাব্যিক ১ (একটি মুক্তগদ্য)
©anjan ghosh roy


কাব্যিক ১
©অঞ্জন ঘোষ রায়
কার বা কাদের নিশ্বাস এ গাছ পাতারা সবাই থেকে থেকে মাথা ঝাঁকিয়ে ওঠে,তার তদন্ত করতে গিয়ে আমি বুঝেছি যে, যারা ঘুম ছাড়া পৃথিবীতে দিন এর পর দিন বেঁচে আছে,এটা তাদেরই বাঞ্ছনীয় কাজ।
তাদের মুঠোর ভিতর ঝুল ,কালি, রং, তেল, রোদ্দুর, ঘেন্না ,ইচ্ছে ,আদর , শব। সব শবঘন আক্ষেপ আর যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে থাকে। 
কোনো শিল্পী চেষ্টা করে দেখেনি কখনো যে ছবি আঁকা শেষে তুলি ধোয়া জল ছিটিয়ে দিয়েও , আগুনের দলা নেভানো যায়।
কোনো রাত কখনো পারেনি সমগ্র জীব জাতি কে ঠিক একইসাথে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে।
কখনো কোনো কাগজ এর চরিত্র ,কালি ছাড়া দাম পায়নি তাদের ইচ্ছে মতন।আমাদের মূল্যবোধ এ অনেক কিছু লেখার থাকলেও,বলার থাকলেও সেসব স্নায়ুর অন্ধকারেই মারা যায় অনেক সময়।ভ্রূণ নষ্ট হতে হতে, জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা কমে গেলে ,কবির জীবনে অবশিষ্ট থাকে  ঘাম রক্ত খুন জল তেষ্টা ।কজন খোঁজ রাখি?কেউ না।
আমরা প্রত্যেকে ক্ষয় নিরাময় শিখে যাই একটা সময় বাদে।
কত তাপ এ পুড়ে যায় ঘাস,কত টা খয়েরী হলে মাটির রং,তবে বৃষ্টি নামে।আকাশ এর কতটা ক্ষিদে পেলে পলকা মেঘ ঘন হতে শুরু করে,জানার দরকার আছে কি? আলবাত আছে।
আমাদের ভিতর ভিতর মায়াপথ আর ছায়াপথ কতটুকু মসৃণ অথবা ক্ষীণ সেটাও বোঝার চেষ্টা করেছিল কত গুলো মানুষ। তারা এখন রোজ দিন গরুর মত জাবর কাটে কতগুলো হ্যাংলা মার্কা শব্দ বাক্য মুখে  নিয়ে।
কি এমন তাপ আছে তোমার ভিতর!তুমি কতদিন মানুষের মুখ দেখতে দেখতে বিরক্তিতে সেই মানুষের ভিড় এই আবার ঝাঁপ দিতে চেয়েছ! কত গুলো ঘেন্নার ঠোঙা পুড়িয়ে শীত এর রাতে ঘরের ভিতর হাত সেকেছ? আমি প্রশ্নের পর প্রশ্নই করে যাব,মরে যাবে তোমার উত্তর যথারীতি।তখন তুমি বোবা সেজে ইশারা য় কথা বলতে শুরু করবে।আর আমার ঠিক তক্ষনি,গলগল করে রক্ত বেরোতে থাকবে চামড়া ফেটে,তুমি আতকে উঠে এগিয়ে আসবে।ভুলে যাবে ওই মুহূর্তে বেমালুম,কখনো কোনো সময় আমি বলেছিলাম,"আমি কবি হতে চাই স্নিগ্ধা"।
তুমি এবার ঠিক আগের মতোই হেসে উঠবে,আর মজা করবে আমার ক্ষমতার দিকে তাকিয়ে।আমি দুটো হাত দিয়ে মেঝে খুড়ে দেখে নেবো কতটা নিচে মানসিক ভাবে অসুস্থ হবার আরো হাজার একটা সু-পন্থা বেছে নেওয়া যায়।
সুস্থ পৃথিবীর থেকে সরে গিয়ে আমি বেঁচে যাব।
এতটা সময় ধরে কেউ একটুও নড়েনি তার সিট থেকে।ধৈর্য আর আগ্রহ হারিয়ে কোনো  জীব জাতি পারেনা ইলেকট্রিক এর তারে বসে ট্রাফিক পুলিশের ঘুষ নেওয়া দেখতে,
কিংবা কোনো অন্ধ মানুষ এর ওপার হবার চেষ্টা।
এখানে কোনো কিছুর সাথে কোনো সামঞ্জস্য নেই,তবুও আছে। কার দখলে আমাদের কাব্যিকতা? এটা আমাদের না বুঝলেও চলবে। এটা মনে রাখতেই হবে,
ছাদ এর সিড়ি তে বসে সিগারেটের ধোঁয়া ছড়িয়েও কুয়াশা বানানো যায় । 

©Anjan ghosh roy






বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৯

Nilanjan kothay? _part 3_ © Anjan Ghosh Roy 2019

©Anjan Ghosh Roy
নীলাঞ্জন কোথায়? (Part 3)
©অঞ্জন ঘোষ রায়

দেড়টার ট্রেইন টা ধরতেই হবে ওকে।স্টেশন এর কাছাকাছি এসে গেছে নীলাঞ্জন।গলি রাস্তা দিয়ে সাবলীল ভাবে মুখ তুলে হেঁটে যাওয়া টা গভীর দুর্ঘটনার সম্ভাবনা।সবই চার পায়া দের কারুকাজ এর নমুনা এদিক ওদিক ছড়িয়ে আর কি!
নীলাঞ্জন এর কাছে ফোন নেই ।গত বছর একটা পুরনো স্মার্ট ফোন কেনে একজন এর কাছ থেকে,সেটা এখন দিনের বেশির ভাগ সময় প্যারালাইজড হয়ে পড়ে থাকে পড়ার টেবিলে।গতকাল সোশ্যাল মিডিয়া মারফত একটা দারুন বই এর খোঁজ পায় ,বই এর নাম "ফুরিয়েছে অসুখ?"লেখক এর নাম "অনিমেষ পাত্র"।লোকাল বই এর দোকান গুলোতে খোঁজ করে না পাওয়ায় আজ কলেজ স্ট্রিট গিয়ে নিজেই কিনে আনবে ঠিক করেছে,ওখানে ঠিক পেয়ে যাবে নিশ্চই।দাম কত ঠিক জানে না,আপাতত গত কয়েক মাসে জমানো তিনশো টাকা নিয়েই বেরিয়ে এসেছে।
টিকিট হাতে নিয়ে কাউন্টার এর পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে একটা মোটা সোটা লোক এর ধূমপান করার অদ্ভুত কায়দা টা লক্ষ্য করছে নীলাঞ্জন।লোকটার দুটো আঙ্গুল না থাকায় সিগারেট ধরেছে অন্যরকম ভাবে।ধোঁয়া টা কিভাবে হাওয়াতে মিশে যাচ্ছে সেটা দেখতে দেখতে নীলাঞ্জন নিজেও যেনো কোথায় একটা মিশে যাচ্ছিল।ঠিক তখনই ট্রেইন এর হুইসেল ওকে ফিরিয়ে আনে প্ল্যাটফর্ম এ।এভাবে ওকে অনেকেই ফিরিয়ে আনে,কখনো কুকুরের ডাক,কখনো কাকের,কখনো ফেরিওয়ালার, কখনো ট্রেইন এর,এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।
ট্রেইন এ উঠে দুদিকে দেখে , ডান দিকে শেষ কোনে বেশ ফাঁকা দেখে ওখানে গিয়ে বসে পড়ে,তবে জানলা দিয়ে ব্যাপক কড়া মাপ এর রোদ আসা তে ওকে একটু সরে আসতে হয়।কামরা টা বেশ ফাঁকা ফাঁকা।ওই দিকের কোণ এর সিট টা তে কেউ ভাত ঘুম দিচ্ছে,কেউ জানলার বাইরে চোখ রেখে কানে হেডফোন গুঁজে দিব্যি ঠোঁট মেলাচ্ছে।ওদিকে চারটে ছেলে দরজার সামনে দাড়িয়ে গুরুগম্ভীর কিছু টপিক নিয়ে আলোচনা করছে, ব্যাস আর কেউ সেরকম এদিক টা তে নেই।শুধু ট্রেইন এর হাতল গুলোর শব্দ কামরা টা কে মাতিয়ে রেখেছে।দুয়েক স্টেশন পেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ভিড় একটু বাড়ছে,কিন্তু নীলাঞ্জন এর এদিকটা কেউ তেমন আসতে গিয়েও আসছেনা।
নীলাঞ্জন এর পাশেই শুয়ে রয়েছে সিট এর ওপর একটা বড় বড় চুল দাড়ি ওয়ালা ,ময়লা গোছের জামা কাপড়,এবং এই গরমে মোটা কম্বল জাতীয় কিছু জড়িয়ে রাখা একটা সাধু মার্কা লোক।মাথার কাছে একটা বড় মোটা লাঠি রাখা আছে,আর একটা সিদুর মাখানো ভোঁতা ত্রিশূল। 

কলেজ স্ট্রিট সেরকম পরিচিত এলাকা নয় নীলাঞ্জন এর কাছে,এর আগে একটা পত্রিকার সুবাদে গেছিল যদিও, মাত্র একবার,সেসব অতীত।নীলাঞ্জন আসলে অনেকটা সমসাময়িক মানুষ জন এর থেকে বেশ পিছিয়ে পড়া একটা ভাবনাময় মানুষ। বন্ধু বান্ধব তেমন নেই খুব একটা সেকারণেই।
টালিগঞ্জ এ ট্রেইন থামতেই একটা মেয়ে উঠে নীলাঞ্জন এর উল্টো দিকের সিট এ এসে বসে,আর ওদিকের সিট এ দুজন বয়স্ক লোক এসে বসেন।নীলাঞ্জন একটু ইতস্তত বোধ করলেও, কিছুতেই জানলার বাইরে চোখ রাখতে পারছিল না।বারবার মেয়ে টির দিকে তার চোখ বাবাজীবন যেতে ই থাকে,কিন্তু কেন! আহামরি সুন্দরী তো নয়,তবে একটা ইউনিক ব্যাপার রয়েছে,আর সেটা আসলে কি,সেটাই বোঝার চেষ্টায় রয়েছে নীলাঞ্জন।জানলার দিকে তাকিয়ে রয়েছে মেয়ে টি, হাতে রিস্ট এর ওখানে একটা ফিনফিনে ট্যাটু ,স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না কারণ অর্ধেক টা ঢেকে রয়েছে ওর হাতে থাকা সাইড ব্যাগ এর জন্য।ট্যাটুর দিকে চোখ রাখতে গিয়ে পাশেই ব্যাগ থেকে বেরিয়ে থাকা একটা বই এর অংশ দেখতে পায়,এবং লেখক এর নাম লেখা রয়েছে "অনিমেষ" পদবী টা দেখা যাচ্ছে না।
কিন্তু এই বইটি তো লাল  রং এর,নীলাঞ্জন যে বইটি কিনতে যাচ্ছে আর কি,সেটা তো কালো রং এর কভার।এটা কি অনিমেষ পাত্র ই তবে!
 মেয়ে টি একভাবে বসে রয়েছে,জানলার বাইরে তাকিয়ে।ট্রেইন এর দুলুনি তে একটু দুলছে মাত্র।নীলাঞ্জন ভাবছে ওর যে বই টা দরকার সেটার ব্যাপারে মেয়ে টি যদি কোনো সাহায্য করতে পারে।কিন্তু কথা কি ভাবে শুরু করবে সেটাই বুঝতে পারছেনা।
অনেকক্ষন একভাবে তাকিয়ে থাকায় মেয়ে টি এবার সেটা নোটিশ করে,এবং নীলাঞ্জন এর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে "কিছু বলবেন কি?" নীলাঞ্জন ঘাবড়ে গেলেও এই সুযোগ টা হাতছাড়া না করে,জানতে চায় বই টির ব্যাপারে। কথায় কথায় এটা জানতে পারে মেয়ে টি ও ওই বই টি কিনতেই কলেজ স্ট্রীট যাচ্ছে।নীলাঞ্জন তার কাছে জানতে চায়,যদি তাকে বই টা পাওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করে,কারণ ও এলাকা টা সম্পর্কে সেরকম অবগত নয়।
মেয়ে টি একটু চুপ থেকে তারপর বলে,ঠিক আছে,চলো,প্রব্লেম নেই।
নীলাঞ্জন আপনি থেকে তুমিতে তে স্থানান্তর এ একটু ভাবতে বসে।এভাবেই মানুষ পরিচিত হয়! কেউ আমরা চিনি না একে অপরকে,তবু ঘটনা চক্রে আমরা পরিচিত হই।আমরা ঘনিষ্ঠ হই,কাছে আসি,সময় অনুযায়ী সরেও যাই,দূরেও যাই, ফুরিয়েও যাই।
এসব ভাবতে ভাবতে কখন ট্রেইন প্ল্যাটফর্মে এসে দাড়িয়েছে,আর মেয়ে টি কতবার যে ডেকেছে সেটা বুঝতে পারেনি।শেষবার কানে এলো,"কি হল,উঠবে তো! এসে গেছি তো,নামতে হবে"।
নীলাঞ্জন চমকে উঠে বলে,"ওহ এসে গেছি না!" ততক্ষণ ট্রেইন পুরো ফাঁকা হয়ে গেছে।দুজন নেমে হাঁটতে থাকে।যতক্ষণ না পৌঁছায় ততক্ষণ অনেক কথা বলতে থাকে ওদিকের মানুষ টা,আর নীলাঞ্জন খানিক শুনতে থাকে,খানিক না শোনা। ভিড় এর মধ্যে অনেকবার নীলাঞ্জন এর হাত, মেয়ে টির হাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে চলে যেতে থাকে।নীলাঞ্জন অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছে বারবার,একটা ঠেলা রিক্সা পিছন দিক থেকে এসে সরতে বলছিল , মেয়ে টি ওর হাত ধরে টেনে ফুটপাথ এ হাঁটার জন্য বলে।এভাবে হাঁটতে দেখে একটু এমন ভাবে বকে দিল নীলাঞ্জন কে,যেন অনেক দিন এর পরিচিত।নীলাঞ্জন হঠাৎ থেমে গিয়ে মুখ টা নামিয়ে জিজ্ঞেস করে ,তোমার নাম টা জানিনা আমি,বলবে?
মেয়ে টি বলল,"আমিও তো জানিনা তোমার নাম,এতে কিছু কি  আদৌ যায় আসে? তাড়া তাড়ি এগোও ,বইটা কিনতে হবে তো! সামনেই।এসে গেছি।"
বইটা কিনে ঠিক তেমনি অন্যমনস্ক হয়ে কথা কিছু শোনা কিছু না শোনা করে ফিরতি ট্রেইন এ উঠে বসে।ততক্ষণ এ বিকেল চার টের ও বেশি। নীলাঞ্জন কে অনেকবার বলার পরেও কিছু ই খেতে চায়নি।বলেছে খাওয়ার ইচ্ছে নেই।আসল ব্যাপার টা নীলাঞ্জন সামনে আনেনি।বইটার দাম ছিল ২৮০/- ।আর ট্রেইন ভাড়া দিয়ে পকেট খালি।প্রচণ্ড ক্ষিদে পেলেও টাকা না থাকায় সেটা লুকিয়ে নিতে হয়েছে। মেয়ে টি কিছুটা আন্দাজ করতে পারলেও স্বল্প সময় পরিচিত হওয়ায় কিছুই করার ছিল না।
ট্রেইন ছাড়ল।নীলাঞ্জন আরেকবার জিজ্ঞেস করবে ভেবেও করল না,ওর ইচ্ছে করছিল মেয়ে টি র সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে।কিন্তু প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে সেটা ভেবে গুটিয়ে থেকে গেল।ট্রেইন এখন ব্যাপক ভির।জানলার দুদিকে পরস্পর মুখোমুখি বসে।কোনো কথা নেই।মাঝে মাঝে চোখ পড়লেও একটু মাখা মাখা হাসি তারপর আবার চারটে চোখ জানলার বাইরে।আর ৫ টা স্টেশন ক্রস করলেই মেয়ে টি কে নেমে যেতে হবে।এখানে দুজনের মধ্যেই একটা খারাপ লাগা কাজ করছিল।কার মধ্যে বেশি সেটা বলা খুব কঠিন।

এরই মধ্যে মেয়ে টি নীলাঞ্জন কে ডেকে জানতে চায় "আকাশ টা এমন কেন?" নীলাঞ্জন অনেকক্ষন আগেই খেয়াল করেছে এই মুহূর্তে আকাশ এ অনেক গুলো রং এর সমাবেশ তৈরি হয়েছে।মেঘ গুলো অনেকটা কোনো একা ফুটপাথ এর বাচ্চার মাথায় এলোমেলো থাকা চুল এর মতন।নীলাঞ্জন চুপ। মেয়ে টি এবার জানতে চায়,"কি হলো উত্তর নেই ?"। নীলাঞ্জন বললো" আছে।বলছি।" শোনো,-

"আকাশ টা আজ এরকম কারণ এই মুহূর্তে একটা ছেলে একটা মেয়ের অনেকটা কাছাকাছি এসে গল্প করছে , আজ রাতে ঠিক কত গুলো জোনাকী একসাথে প্রেম করবে সেই নিয়ে দুজনেই ভিতর ভিতর আলাপ জমিয়েছে।আকাশ টা এরকম কারণ মাঠ এর মাঝখানে একটা ঝিল অপেক্ষায় থাকবে কখন একটা চাঁদ সশরীরে হাজির হবে টসটসে ঠাণ্ডা ছায়া দিতে ।আকাশ টা এরকম কারণ ইলেকট্রিক এর তার গুলো মানুষ এর মুখ এর বিকৃতি দেখে দেখে বিভৎস ভাবে ক্লান্ত,তারা চায় এখন একটু লাল মুখো মেঘ দেখবে আকাশে। আকাশ টা তাই এরকম।ধরে নাও, বিশেষ করে,তোমার ভালো লাগবে বলেই আকাশটা আজ এরকম ভাবে সেজে এসেছে!"

নীলাঞ্জন কথা শেষ করে জানলার দিকে তাকায় যথারীতি আগের মতোই।
মেয়ে টি একভাবে নীলাঞ্জন এর দিকে তাকিয়ে থাকে । অবাক হয় একটু।
এর পরেই টলিগঞ্জ । মেয়ে টি নেমে যাবে।আর কি দেখা হবে কখনো? কেনোই বা হবে? আর তো কোনো দরকার নেই।ও কেউ নয়।একটা কৃতজ্ঞতা স্বীকার জাস্ট,বইটা দরকার ছিল ,সেটা কিনতে সাহায্য করেছে।ব্যাস আর তো কোনো ইস্যু নেই।নীলাঞ্জন নিজে নিজে নিজেকে ই বলছে। 
ট্রেইন টলিগঞ্জ ঢুকছে এবার। মেয়ে টি উঠে দাড়ায়।দুজন এর চোখ দুজন এর দিকে।ওপাশ থেকে বলল "এলাম"।নীলাঞ্জন ঘাড় নেড়ে বলল "ok"। জানলার দিকে মুখ করে নিল আবার।ট্রেইন সিগন্যাল পায়নি এখনো দাড়িয়ে আছে। মেয়ে টি প্ল্যাটফর্মে  নেমে নীলাঞ্জন এর জানলার কাছে এসে দাড়াল।নীলাঞ্জন জানতে চাইল "কিছু বলার আছে ?? জানলার ওপার থেকে আরেকটা প্রশ্ন এলো- "আবার কখনো দেখা হবে?" নীলাঞ্জন বলল "হবে হয়তো"।

ট্রেইন ছাড়ল।দুরত্ব টা বাড়ছে।মানুষ দুটো পরস্পরের দূরে সরছে এবার।একটা সময় আর কিচ্ছু নেই।ট্রেইন এর গাদাগাদি এতক্ষন পর কি প্রচণ্ড তেতো লাগছে,এতক্ষন টের পায়নি নীলাঞ্জন।আকাশ টা তখনও একইরকম আছে,এবার একটু অন্ধকার জোট বেঁধেছে।সেভাবে না দেখতে পাওয়া রিস্ট এর ফিনফিনে  ট্যাটু টা চোখে ভাসছে।আর নীলাঞ্জন ভিতর ভিতর একটা কথা কয়েক বার রিপিট করতে থাকল - 
"তুমি তোমার নাম দিলে না" 
"তুমি আমার নাম নিলে না"।।
© অঞ্জন ঘোষ রায়
(পরবর্তী আসছে)

বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০১৯

Nilanjan Kothay? 2_ ©anjan ghosh roy _ 2019

©Anjan ghosh roy
নীলাঞ্জন কোথায়?(২)
©অঞ্জন ঘোষ রায়


নীলাঞ্জন এলোমেলো ভাবে গঙ্গার পারের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এখন  ছাতিম গাছ টা র নিচে একটু বসেছে।গুড়ো গুড়ো সাদা ফুল গোটা গাছ মেখে রয়েছে।মাটি থেকে এই গাছ টা ওঠার পরেই অদ্ভুত ভাবে বেঁকে গিয়ে আবার সোজা হয়ে দাড়িয়েছে।গাছ টা র গায় হেলান দিয়ে অর্ধেক মাথা ভাঙা একটা কালচে পাথর এর মূর্তি রেখে গেছে কেউ। গত পরশু ও দেখে গেছে এটা এখানে ছিলনা।নীলাঞ্জন সেদিকে তাকিয়ে ভেবে নিল,এই মূর্তি টা কার হতে পারে!কবেকার হতে পারে! নিশ্চয়ই কারো কাছে দারুন গুরুত্ব ছিল এটার,কেউ ভালোবেসে কাউকে দিয়েছিল কি!  হতে পারে এই মূর্তি টা কে উপলক্ষ করেই কারো মন ভালো থাকত।সত্যি বলতে আরো অনেক কিছুই হতে পারে।
নীলাঞ্জন এর এই বদ স্বভাব টা সময় এর সাথে সাথে বাড়ছে।সমস্ত কিছুর মধ্যে একগাদা প্রশ্ন ভেবে তোলপাড় করা।
একটু দূরেই একটা চা এর দোকান থেকে গ্লাস এ চামচ নাড়ার শব্দ দেওয়ালে দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে নীলাঞ্জন এর কানে এসে পৌঁছল।মূর্তি থেকে চোখ সরিয়ে দেখল দোকান টা র সামনে চারটে কুকুর করুন ভাবে তাকিয়ে আছে দোকান এর লোক টার দিকে ,কেউ দাড়িয়ে,বসে,কেউ আধ শুয়ে।তখন ভোর এর অন্ধকার ভাব টা খানিক কেটে এসেছে।
নীলাঞ্জন গত রাতে কথা বলে রেখেছিল ঝুম এর সাথে,যে আজকে অনেকদিন পর ভোর টা কে হেঁটে মহা তদন্ত করবে। সেই অনুযায়ী অ্যালার্ম দিয়ে রাখে পৌনে পাঁচ টা য়। অ্যালার্ম টা বাজার আগেই নীলাঞ্জন জেগে গেল, এলার্ম শুরু হবার সঙ্গে সঙ্গে স্নুজ করে দিয়ে,ঝুম কে পরপর ফোন করতে থাকল । রিসিভ করছেনা।বিরক্ত হচ্ছে নীলাঞ্জন।বেশ কয়েকবার ফোন করার পর একটা ম্যাসেজ এলো।ঝুম আজ আসতে পারবেনা,সারা রাত ঘুমাতে পারেনি,ঘুম আসেনি।নীলাঞ্জন ফোন স্ক্রিন অফ করে চুপচাপ নাইট ল্যাম্প এর দিকে তাকিয়ে থাকল।এভাবেই নাইট ল্যাম্প গুলো প্রত্যেকের ঘরে জ্বলে প্রতিদিন ,শুধু রাত এর জন্যেই।একটু সকাল হলেই নাইট ল্যাম্প এর সুইচ এ হাত চলে যায় বাড়ির মালিক এর। নীলাঞ্জন নিজেও কি এরকমই ? অন্ধকার সময় মানুষ তাকে ব্যবহার করে,আলোর সময় নিভিয়ে দ্যায়। শুধু নীলাঞ্জন কেন অনেকের ক্ষেত্রেই তাই। নীলাঞ্জন এর খানিকটা মুড অফ হয়ে যায়।আবার শুয়ে পড়ে। মিনিট পাঁচেক এপাশ ওপাশ করে উঠে বসে, তারপর কি যেন ভেবে একলাই বেরিয়ে যায়।ঝুম কে একটা এস এম এস করে দ্যায়,"যাবি না যখন কাল কে বললেই পারতি,তাহলে আর ফোন করতাম না,একাই বেরোলাম।" হতে পারে অভিমান টা একটু হালকা হল।বাইরে তখন আঁটোসাঁটো কুয়াশা চেপে ধরেছে সব কিছু কে।গলির মুখে যেতেই একটা পুকুর দেখা যায় , পিচরাস্তার ওপারে।জল এর উপরিভাগে একটা স্বচ্ছ ঝাপসা স্তর পড়ে আছে।একটা ঢিল ছুড়লে সেই জল পৃথিবীর ওপর দারুন অভিমান করবে, দেখেই মনে হচ্ছে। নীলাঞ্জন এর অভিমান টা ও তেমন ই।
নীলাঞ্জন এগোতে থাকে, বড় রাস্তার দিকে।দুয়েকজন ফুল তুলতে ব্যস্ত এর ওর বাগানে।রাস্তা টা ভিজে রয়েছে।গত রাত এর বৃষ্টি টা অমায়িক ছিল।একটু এগিয়ে একটা বড় মাঠ,তার গা ঘেঁষে একটা লাল বাড়ি,একটা বট গাছ,একটা ছোট্ট ঝিল,দুটো ধবধবে সাদা হাঁস গা ঠেকিয়ে এক কোণে চুপ করে ভেসে আছে মাথা নিচু করে।কুয়াশা তে সমস্ত টা নীলাঞ্জন এর কাছে অচেনা মনে হচ্ছে। ঝিল এর পাশ দিয়ে যেতেই একটা সোনালী মথ কে জল এর ওপর ছট্ফট্ করতে দেখে নীলাঞ্জন হাত এ করে তুলে একটা শ্যাওলা ভরা পাঁচিল এর ওপর বসিয়ে দ্যায়। হাঁটতে হাঁটতে ভাবতে থাকে ওর প্রিয়জন নিশ্চই ওকে খুঁজছে এতক্ষণে,খুব ভয় পেয়েছে আর হয়ত ঝিল এর ধারে কাছেই আসবেনা কোনোদিন,সবসময় তো নীলাঞ্জন থাকবে না ,তখন কে বাঁচাবে ওকে! নিশ্চই কেউ বাঁচাবে ঠিকই।চারদিকে এত মানুষ আছে।নীলাঞ্জন মাথা তুলে দেখল কোনো মানুষ সেই মুহূর্তে নেই,ও একলাই হাঁটছে,আর কুয়াশা।ওপর দিকে তাকিয়ে দেখল ইলেকট্রিক তার গুলো ও কুয়াশা তে জড়িয়ে রয়েছে,আবছা।কোত্থেকে একটা ফিঙে উরে এসে সেই তার এর স্থিরতা ভেঙে দিল।এভাবেই আমরা ও অনেক মানুষ এর নিজেদের স্থিরতা ভাঙি।অনেকটা উপর দিয়ে যথাসম্ভব একটা বিরাট চিল উড়ে গেল ধীর গতিতে কুয়াশা টা কাটতে কাটতে।হঠাৎ ঝুম এর ওপর রাগ হল একটু।ও সাথে থাকলে এই সাধারণ তবুও অসাধারণ মুহূর্ত টা,এই ছবি টা ভাগাভাগি করে নেওয়া যেত।ঝুম বোঝে,ঝুম জানে বিদেশি কবি দের নাম,ও তাদের লেখা পড়ে।ও নীলাঞ্জন এর লেখাও পড়ে।নীলাঞ্জন শুধু অন্ধের মতো লিখতেই থাকে কুয়াশা কাটতে কাটতে,যেভাবে চিল টা  উড়ে  গেল একটু আগে ওর ই মাথার উপর দিয়ে।এবার ভাবনা টা কে সরিয়ে দিল নীলাঞ্জন।হাঁটতে থাকল।
চা এর দোকান এর সামনে একটা ছোট্ট হনুমান মন্দির আছে ,সেখানে একজন বৃদ্ধ শুয়ে আছে অর্ধেক শরীর রাস্তায়,পাশে দেশি মদ এর খালি বোতল ।এই লোক টা কি শুধুই মাতাল? কেন মাতাল,কেন নেশা করে বাইরে পড়ে আছে এভাবে! কেউ খুঁজতে আসবে না! বাড়ি কখন যাবে!একদিন এভাবেই মারা যাবে? কোনদিন হয়ত আর উঠবেই না,সেটা আজ ও হতে পারে।ভাবতেই নীলাঞ্জন নিজেকে দেখতে পেল কিভাবে যেন ঐ বৃদ্ধের ভিতর।সরে গেল সেখান থেকে।সিড়ি দিয়ে নেমে জল এর কাছাকাছি গেল নীলাঞ্জন।গঙ্গাস্নান এ ডুব সেরে অর্ধেকটা উঠেছে ফ্যাকাসে কমলা রং এর একটা গোল বল। আকাশ এর রঙ টা কে এই মুহূর্তে কি নাম দেওয়া যায় সেটা ভাবতে ভাবতে দুটো হাঁটুর উপর হাত দুটো রেখে মাথা টা নিচু করে নিল।চারপাশে কয়েক টা কাক এর আত্মবিলাপ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই।
©অঞ্জন ঘোষ রায়।     (পরবর্তী আসছে)

শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৯

Nilanjan kothay? 1_ ©Anjan Ghosh Roy _ 2019

© অঞ্জন ঘোষ রায়







নীলাঞ্জন কোথায় ? (১)
নীলাঞ্জন বসে আছে হাঁটু মুড়ে। ভাত এর থালা নিয়ে রান্নাঘর এর মেঝে তে বসে আছে অনেকক্ষন। অর্ধেকটা ভাত সাদা, শুকনো।অর্ধেকটা এলোমেলো ভাবে লালচে ঝোল এ মেখে রয়েছে।আর কিছুই প্রায় নেই থালায়।মেঝে তে যে কটা ভাত এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে,সেগুলো দিব্যি পিপড়ের রাজধানী থেকে সেনাবাহিনী এসে বেশ দায়িত্ব সহকারে নিয়ে যাচ্ছে।নীলাঞ্জন ঠায় বসে থেকে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।ভাবছে এদের সাথে তার হয়তো কোনো যোগসূত্র আছে।এভাবেই নীলাঞ্জন মুখে করে এত বড়বড় ভাত নিয়ে যাবে কখনো।তখন ও নিজে  পিপড়ে দের দলে সর্দার হবে।যদিও তখন জানবে না ও যে ওই খাদ্য বস্তুটির নাম ভাত।
পিছন এর দেওয়ালে ঘড়ি টা টিক টিক শব্দ করছে ,দুপুর টা কে আরো নিস্তব্ধ করে দিয়েছে।পিপড়ে দের নিয়ে উদ্ভট কথা ভাবতে ভাবতে মাথা তুলে রান্নাঘর এর জানলার ওপারে চোখ রাখে নীলাঞ্জন।মেহগনি পাতা গুলো ঝরে গেছে এতদিন ধরে,এখন সদ্য গজিয়ে ছে নতুন পাতা,হালকা লাল লাল। কয়েকদিন বাদেই বিভৎস ভাবে সবুজ হয়ে যাবে মেহগনি গাছ টা। নীলাঞ্জন তখন ও এভাবে তাকিয়ে থাকবে।এরকম দুপুর আবারো আসবে।সত্যি ই আসবে? যদি না আসে! এসব ভাবতে ভাবতেই অনেকটা দুর থেকে ঘুঘুর ডাক কানে এলো নীলাঞ্জন এর।বড্ড বিষন্ন লাগছে দুপুর টা কে এবার।আরো নিস্তব্ধ লাগছে। কোনো নির্জন জঙ্গলের প্রাচীন গাছ এর শিকড় এর শেষ প্রান্তে যতটা নিস্তব্ধতা থাকে ,ততটা নিস্তব্ধ।
নীলাঞ্জন এর মনে পড়ে যায়,ছেলেবেলায় এরকম হালকা দুপুরে স্কুল মাঠ এর এক পাশে অশ্বত্থ গাছ এর ছায়া তে, কচি ঘাস এর কার্পেট এর মতো একটু জায়গা ছিল। সেখানে আসলে খুব একটা কারো পা পড়ত না বলেই অমন যত্ন করা ঘাস ছিল।কোনমতে দুপুরের খাওয়ার পরেই দৌড়ে ওখানে।ওটা স্থায়ী ঠিকানা ছিল নীলাঞ্জন এর যতক্ষণ না দুপুর গড়িয়ে বিকেল হোত। সটান হয়ে শুয়ে পড়ত ঘাস এর ওপর,পাতা গুলো হাওয়া তে তিরতির করে কাঁপত,তার ফাঁক দিয়ে আকাশ এর টুকরো।আরেকদিকে গোটা আকাশ এ পাক খাওয়া চিল।ওখান থেকেই স্কুল এর পিছনের ওয়াটার ট্যাঙ্কির মাথা টা দেখা যেত। চিল উড়ে এসে বসত,আর কাক গুলো ওকে জ্বালাতন করত বারবার।নীলাঞ্জন এর বিরক্তি হত।কপালে বিরক্তির দের দুখানা ভাঁজ নিয়ে উঠে বসত।মন খারাপ হয়ে যেত ওর।মাথা নামিয়ে ঘাস এর দিকে তাকিয়ে দেখত,ছোট ছোট নীল ফুল এদিক ওদিকে ।থুতনি টা ঘাসে ঠেকিয়ে চোখ সমান্তরালে রেখে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকত অনেকক্ষন।বিকেল হলে হইচই শুরু হলে,ওর বয়সি বাচ্চারা খেলতে আসলে একে একে,নীলাঞ্জন সেখান থেকে উঠে যেত। ঘরে চলে যেত।কাঠ এর বড় জানলার পাশে বসে নারকেল গাছ এ কাক এর বাসার দিকে তাকিয়ে থাকত।
নীলাঞ্জন এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ বাস্তবে ফিরে এলো। ভাত এর দিকে তাকিয়ে থাকল কয়েক সেকেন্ড। থালা টা তুলে নিয়ে কল পারে গিয়ে এক কোণে ভাত গুলো উপুড় করে দিল। কেউ ঠিক এসে খেতে শুরু করে দেবে পরে।নীলাঞ্জন হাত ধুয়ে মুছে এসে খাট এ শুয়ে পড়ল বালিশ টা কে বুকে নিয়ে।চোখ বন্ধ করে  জেগে থাকতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল কিছুক্ষন এর মধ্যেই।দুপুর ততক্ষণ এ বিকেল হয়ে গেছে।বেশ কত গুলো কোকিল ডাকাডাকি করছে অনবরত অনেকটা দূরে ,কোনো গাছে কচি পাতার মিছিল এর ভিতর, আড়ালে।
©অঞ্জন ঘোষ রায়
#anjanghoshroy

শুক্রবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

মাদল _ একটি রাত এর অভিজ্ঞতা © anjan ghosh roy 2019



"মাদোল"
মাদোল বাজছে জঙ্গলে,ঘন জঙ্গল।এই রাস্তা টা যেখানে যাতায়াত শেষ করেছে মানুষ এর,ঠিক সেখান থেকে মিনিট পাঁচেক।আরো কিছু মানুষ সেখানে হেঁটে যায়,কিছু মানুষ সেখানেই থাকে,আর জড়িয়ে থাকে গোটা মাহোল ,মাদোল এর মাদকে।।
আমি ঠিক সন্ধ্যা ফুরিয়ে গেলে রাস্তায় নেমেছি,হাঁটছি,কাউকে কিছুই বলে আসিনি,আমি জঙ্গলের দিকে হাঁটছি।জলের ছায়া পড়েছে আকাশে,রাস্তা টা ভাঙাচোরা,একটা ছন্দ আসছে পায়ে,পাহাড় এর গা বেয়ে নেমে এসেছে হয়ত!না কোনো ভয় নেই।অচেনা জলবায়ুর গন্ধে আমি মেতে আছি।পৃথিবী তে মনে হয় আমি জেগে আছি একাই ,ওই জঙ্গল এর সাথে।সবকিছু স্থির ,কেউ এখনো রাতের টেবিলে কবিতা না লিখতে পারার কারণে অস্থির হয়ে আছে।এখনো কেউ জল ছাড়া নদীর মাঝখানে উচু পাথর টা য় বসে জোনাকী দের কথা শুনছে।
এসব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে আমি এসে গেছি জঙ্গলের ভিতর।সরু পাথুরে রাস্তা,ফাঁক ফোঁকর দিয়ে আসা আলোয় বেশ খয়েরী।কিছুটা দূরেই আগুন আগুন রং চোখে এসে পড়ল,আমি আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছি।অনভ্যস্ত হাত এ পৃথিবীর এক অসাধারণ অর্থ ধরতে চলেছি।অনেক গুলো সাঁওতালি পোশাক হীন মেয়ে স্বাগত জানিয়ে খাটিয়াতে এনে বসায়।আমি চোখ রগড়াতে রগড়াতে " ঝিঁঝিগা গিতাং ঝিঝ গিনিতা,কিনিতা কিনীতা" তে নিজেকে এলিয়ে দিলাম।
খানিক বাদে সমস্ত টা থেমে গেল,শুকনো ঠোঁটে ধুলো লেগে আছে।উপুড় হয়ে পড়ে আছি জঙ্গলে।আকাশে অল্প নীল,কেউ ডাকছে আমাকে।ঘরে যেতে হবে,ফিরে যেতে হবে।কত গুলো পাখি ডানা ঝাপটে চলে গেল মাথার ওপর দিয়ে গতরাত কে ভুলিয়ে দিতে দিতে।
©অঞ্জন ঘোষ রায়

রবিবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৯

মন মর্জি (কবিতা) anjan ghosh roy


এবার একটু স্থির হয়ে বসা যাক নিজের মর্জি মতন।
তোর আগ বাড়িয়ে রাখা কঠিন হাত,
গুটিয়ে নিস,পরোয়া করিনা।
পেশী গুলো খুব ক্লান্ত,এখন অনেকখানি রাত।
তোর দেওয়া রঙচঙে কার্পেটে
 জাপটে ধরেছে খ্যাসখ্যাসে ধুলো।
আমার জানলায় অনাথ ভায়োলিন এর
 আনাড়ি দুঃখ গুলো হতাশ হয়ে পড়ে থাকে আজকাল।
আমি হাসি,গান গাই,ছবি আঁকি,দিব্যি আছি।
তোর রক্ত রক্ত মুখ চোখ তবুও ঘুম এর ভিতর আসে,
চমকে উঠি, ঘরের দেওয়ালে দেখি 
ছাই এর মতন সাদা স্মৃতিস্তম্ভ।
আমি কালো ভালোবাসি,অন্ধকার পছন্দ করি
 নিজের চেয়েও বেশী,আলো নিভিয়ে রাখি।
আমি উড়তে চেয়ে ছিলাম,এখন আমার 
অল্প আলতো ডানা গজিয়েছে,আমি শিখছি,
আমি পারছি,বাঁচা শিখছি নিজের ইচ্ছে মতন।
রোজ রাত হলে মন খারাপ করা জোনাকির গান শুনি,
আর ভাবি, ছায়া!তুই আরেকটু অন্যের হতে পারতিস।
বেশ খানিকটা দূরে দূরে না হয় থাকতাম।
লেখা: #anjanghoshroy

কবি এবং কেরানী কবি

মহৎ কবি কখনো ডায়েরি লিখবেন না, এটা আপনাকে বুঝতে হবে। তার জীবন কোন সময়ের ভাংচুর এর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে নাকি সুখের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে,কবি যদি...