© অঞ্জন ঘোষ রায় |
নীলাঞ্জন কোথায় ? (১)
নীলাঞ্জন বসে আছে হাঁটু মুড়ে। ভাত এর থালা নিয়ে রান্নাঘর এর মেঝে তে বসে আছে অনেকক্ষন। অর্ধেকটা ভাত সাদা, শুকনো।অর্ধেকটা এলোমেলো ভাবে লালচে ঝোল এ মেখে রয়েছে।আর কিছুই প্রায় নেই থালায়।মেঝে তে যে কটা ভাত এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে,সেগুলো দিব্যি পিপড়ের রাজধানী থেকে সেনাবাহিনী এসে বেশ দায়িত্ব সহকারে নিয়ে যাচ্ছে।নীলাঞ্জন ঠায় বসে থেকে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।ভাবছে এদের সাথে তার হয়তো কোনো যোগসূত্র আছে।এভাবেই নীলাঞ্জন মুখে করে এত বড়বড় ভাত নিয়ে যাবে কখনো।তখন ও নিজে পিপড়ে দের দলে সর্দার হবে।যদিও তখন জানবে না ও যে ওই খাদ্য বস্তুটির নাম ভাত।
পিছন এর দেওয়ালে ঘড়ি টা টিক টিক শব্দ করছে ,দুপুর টা কে আরো নিস্তব্ধ করে দিয়েছে।পিপড়ে দের নিয়ে উদ্ভট কথা ভাবতে ভাবতে মাথা তুলে রান্নাঘর এর জানলার ওপারে চোখ রাখে নীলাঞ্জন।মেহগনি পাতা গুলো ঝরে গেছে এতদিন ধরে,এখন সদ্য গজিয়ে ছে নতুন পাতা,হালকা লাল লাল। কয়েকদিন বাদেই বিভৎস ভাবে সবুজ হয়ে যাবে মেহগনি গাছ টা। নীলাঞ্জন তখন ও এভাবে তাকিয়ে থাকবে।এরকম দুপুর আবারো আসবে।সত্যি ই আসবে? যদি না আসে! এসব ভাবতে ভাবতেই অনেকটা দুর থেকে ঘুঘুর ডাক কানে এলো নীলাঞ্জন এর।বড্ড বিষন্ন লাগছে দুপুর টা কে এবার।আরো নিস্তব্ধ লাগছে। কোনো নির্জন জঙ্গলের প্রাচীন গাছ এর শিকড় এর শেষ প্রান্তে যতটা নিস্তব্ধতা থাকে ,ততটা নিস্তব্ধ।
নীলাঞ্জন এর মনে পড়ে যায়,ছেলেবেলায় এরকম হালকা দুপুরে স্কুল মাঠ এর এক পাশে অশ্বত্থ গাছ এর ছায়া তে, কচি ঘাস এর কার্পেট এর মতো একটু জায়গা ছিল। সেখানে আসলে খুব একটা কারো পা পড়ত না বলেই অমন যত্ন করা ঘাস ছিল।কোনমতে দুপুরের খাওয়ার পরেই দৌড়ে ওখানে।ওটা স্থায়ী ঠিকানা ছিল নীলাঞ্জন এর যতক্ষণ না দুপুর গড়িয়ে বিকেল হোত। সটান হয়ে শুয়ে পড়ত ঘাস এর ওপর,পাতা গুলো হাওয়া তে তিরতির করে কাঁপত,তার ফাঁক দিয়ে আকাশ এর টুকরো।আরেকদিকে গোটা আকাশ এ পাক খাওয়া চিল।ওখান থেকেই স্কুল এর পিছনের ওয়াটার ট্যাঙ্কির মাথা টা দেখা যেত। চিল উড়ে এসে বসত,আর কাক গুলো ওকে জ্বালাতন করত বারবার।নীলাঞ্জন এর বিরক্তি হত।কপালে বিরক্তির দের দুখানা ভাঁজ নিয়ে উঠে বসত।মন খারাপ হয়ে যেত ওর।মাথা নামিয়ে ঘাস এর দিকে তাকিয়ে দেখত,ছোট ছোট নীল ফুল এদিক ওদিকে ।থুতনি টা ঘাসে ঠেকিয়ে চোখ সমান্তরালে রেখে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকত অনেকক্ষন।বিকেল হলে হইচই শুরু হলে,ওর বয়সি বাচ্চারা খেলতে আসলে একে একে,নীলাঞ্জন সেখান থেকে উঠে যেত। ঘরে চলে যেত।কাঠ এর বড় জানলার পাশে বসে নারকেল গাছ এ কাক এর বাসার দিকে তাকিয়ে থাকত।
নীলাঞ্জন এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ বাস্তবে ফিরে এলো। ভাত এর দিকে তাকিয়ে থাকল কয়েক সেকেন্ড। থালা টা তুলে নিয়ে কল পারে গিয়ে এক কোণে ভাত গুলো উপুড় করে দিল। কেউ ঠিক এসে খেতে শুরু করে দেবে পরে।নীলাঞ্জন হাত ধুয়ে মুছে এসে খাট এ শুয়ে পড়ল বালিশ টা কে বুকে নিয়ে।চোখ বন্ধ করে জেগে থাকতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল কিছুক্ষন এর মধ্যেই।দুপুর ততক্ষণ এ বিকেল হয়ে গেছে।বেশ কত গুলো কোকিল ডাকাডাকি করছে অনবরত অনেকটা দূরে ,কোনো গাছে কচি পাতার মিছিল এর ভিতর, আড়ালে।
©অঞ্জন ঘোষ রায়
#anjanghoshroy
নীলাঞ্জন বসে আছে হাঁটু মুড়ে। ভাত এর থালা নিয়ে রান্নাঘর এর মেঝে তে বসে আছে অনেকক্ষন। অর্ধেকটা ভাত সাদা, শুকনো।অর্ধেকটা এলোমেলো ভাবে লালচে ঝোল এ মেখে রয়েছে।আর কিছুই প্রায় নেই থালায়।মেঝে তে যে কটা ভাত এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে,সেগুলো দিব্যি পিপড়ের রাজধানী থেকে সেনাবাহিনী এসে বেশ দায়িত্ব সহকারে নিয়ে যাচ্ছে।নীলাঞ্জন ঠায় বসে থেকে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।ভাবছে এদের সাথে তার হয়তো কোনো যোগসূত্র আছে।এভাবেই নীলাঞ্জন মুখে করে এত বড়বড় ভাত নিয়ে যাবে কখনো।তখন ও নিজে পিপড়ে দের দলে সর্দার হবে।যদিও তখন জানবে না ও যে ওই খাদ্য বস্তুটির নাম ভাত।
পিছন এর দেওয়ালে ঘড়ি টা টিক টিক শব্দ করছে ,দুপুর টা কে আরো নিস্তব্ধ করে দিয়েছে।পিপড়ে দের নিয়ে উদ্ভট কথা ভাবতে ভাবতে মাথা তুলে রান্নাঘর এর জানলার ওপারে চোখ রাখে নীলাঞ্জন।মেহগনি পাতা গুলো ঝরে গেছে এতদিন ধরে,এখন সদ্য গজিয়ে ছে নতুন পাতা,হালকা লাল লাল। কয়েকদিন বাদেই বিভৎস ভাবে সবুজ হয়ে যাবে মেহগনি গাছ টা। নীলাঞ্জন তখন ও এভাবে তাকিয়ে থাকবে।এরকম দুপুর আবারো আসবে।সত্যি ই আসবে? যদি না আসে! এসব ভাবতে ভাবতেই অনেকটা দুর থেকে ঘুঘুর ডাক কানে এলো নীলাঞ্জন এর।বড্ড বিষন্ন লাগছে দুপুর টা কে এবার।আরো নিস্তব্ধ লাগছে। কোনো নির্জন জঙ্গলের প্রাচীন গাছ এর শিকড় এর শেষ প্রান্তে যতটা নিস্তব্ধতা থাকে ,ততটা নিস্তব্ধ।
নীলাঞ্জন এর মনে পড়ে যায়,ছেলেবেলায় এরকম হালকা দুপুরে স্কুল মাঠ এর এক পাশে অশ্বত্থ গাছ এর ছায়া তে, কচি ঘাস এর কার্পেট এর মতো একটু জায়গা ছিল। সেখানে আসলে খুব একটা কারো পা পড়ত না বলেই অমন যত্ন করা ঘাস ছিল।কোনমতে দুপুরের খাওয়ার পরেই দৌড়ে ওখানে।ওটা স্থায়ী ঠিকানা ছিল নীলাঞ্জন এর যতক্ষণ না দুপুর গড়িয়ে বিকেল হোত। সটান হয়ে শুয়ে পড়ত ঘাস এর ওপর,পাতা গুলো হাওয়া তে তিরতির করে কাঁপত,তার ফাঁক দিয়ে আকাশ এর টুকরো।আরেকদিকে গোটা আকাশ এ পাক খাওয়া চিল।ওখান থেকেই স্কুল এর পিছনের ওয়াটার ট্যাঙ্কির মাথা টা দেখা যেত। চিল উড়ে এসে বসত,আর কাক গুলো ওকে জ্বালাতন করত বারবার।নীলাঞ্জন এর বিরক্তি হত।কপালে বিরক্তির দের দুখানা ভাঁজ নিয়ে উঠে বসত।মন খারাপ হয়ে যেত ওর।মাথা নামিয়ে ঘাস এর দিকে তাকিয়ে দেখত,ছোট ছোট নীল ফুল এদিক ওদিকে ।থুতনি টা ঘাসে ঠেকিয়ে চোখ সমান্তরালে রেখে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকত অনেকক্ষন।বিকেল হলে হইচই শুরু হলে,ওর বয়সি বাচ্চারা খেলতে আসলে একে একে,নীলাঞ্জন সেখান থেকে উঠে যেত। ঘরে চলে যেত।কাঠ এর বড় জানলার পাশে বসে নারকেল গাছ এ কাক এর বাসার দিকে তাকিয়ে থাকত।
নীলাঞ্জন এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ বাস্তবে ফিরে এলো। ভাত এর দিকে তাকিয়ে থাকল কয়েক সেকেন্ড। থালা টা তুলে নিয়ে কল পারে গিয়ে এক কোণে ভাত গুলো উপুড় করে দিল। কেউ ঠিক এসে খেতে শুরু করে দেবে পরে।নীলাঞ্জন হাত ধুয়ে মুছে এসে খাট এ শুয়ে পড়ল বালিশ টা কে বুকে নিয়ে।চোখ বন্ধ করে জেগে থাকতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল কিছুক্ষন এর মধ্যেই।দুপুর ততক্ষণ এ বিকেল হয়ে গেছে।বেশ কত গুলো কোকিল ডাকাডাকি করছে অনবরত অনেকটা দূরে ,কোনো গাছে কচি পাতার মিছিল এর ভিতর, আড়ালে।
©অঞ্জন ঘোষ রায়
#anjanghoshroy
এক কথায় অসাধারন।
উত্তরমুছুনখুশী হলাম ভাই
মুছুনঅনবদ্য
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
উত্তরমুছুন♥️সুন্দর♥️
উত্তরমুছুনThnk u sunanda
মুছুনভালো লাগল 👍👍
উত্তরমুছুনThank u moumita di
মুছুন