বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০১৯

Nilanjan Kothay? 2_ ©anjan ghosh roy _ 2019

©Anjan ghosh roy
নীলাঞ্জন কোথায়?(২)
©অঞ্জন ঘোষ রায়


নীলাঞ্জন এলোমেলো ভাবে গঙ্গার পারের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এখন  ছাতিম গাছ টা র নিচে একটু বসেছে।গুড়ো গুড়ো সাদা ফুল গোটা গাছ মেখে রয়েছে।মাটি থেকে এই গাছ টা ওঠার পরেই অদ্ভুত ভাবে বেঁকে গিয়ে আবার সোজা হয়ে দাড়িয়েছে।গাছ টা র গায় হেলান দিয়ে অর্ধেক মাথা ভাঙা একটা কালচে পাথর এর মূর্তি রেখে গেছে কেউ। গত পরশু ও দেখে গেছে এটা এখানে ছিলনা।নীলাঞ্জন সেদিকে তাকিয়ে ভেবে নিল,এই মূর্তি টা কার হতে পারে!কবেকার হতে পারে! নিশ্চয়ই কারো কাছে দারুন গুরুত্ব ছিল এটার,কেউ ভালোবেসে কাউকে দিয়েছিল কি!  হতে পারে এই মূর্তি টা কে উপলক্ষ করেই কারো মন ভালো থাকত।সত্যি বলতে আরো অনেক কিছুই হতে পারে।
নীলাঞ্জন এর এই বদ স্বভাব টা সময় এর সাথে সাথে বাড়ছে।সমস্ত কিছুর মধ্যে একগাদা প্রশ্ন ভেবে তোলপাড় করা।
একটু দূরেই একটা চা এর দোকান থেকে গ্লাস এ চামচ নাড়ার শব্দ দেওয়ালে দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে নীলাঞ্জন এর কানে এসে পৌঁছল।মূর্তি থেকে চোখ সরিয়ে দেখল দোকান টা র সামনে চারটে কুকুর করুন ভাবে তাকিয়ে আছে দোকান এর লোক টার দিকে ,কেউ দাড়িয়ে,বসে,কেউ আধ শুয়ে।তখন ভোর এর অন্ধকার ভাব টা খানিক কেটে এসেছে।
নীলাঞ্জন গত রাতে কথা বলে রেখেছিল ঝুম এর সাথে,যে আজকে অনেকদিন পর ভোর টা কে হেঁটে মহা তদন্ত করবে। সেই অনুযায়ী অ্যালার্ম দিয়ে রাখে পৌনে পাঁচ টা য়। অ্যালার্ম টা বাজার আগেই নীলাঞ্জন জেগে গেল, এলার্ম শুরু হবার সঙ্গে সঙ্গে স্নুজ করে দিয়ে,ঝুম কে পরপর ফোন করতে থাকল । রিসিভ করছেনা।বিরক্ত হচ্ছে নীলাঞ্জন।বেশ কয়েকবার ফোন করার পর একটা ম্যাসেজ এলো।ঝুম আজ আসতে পারবেনা,সারা রাত ঘুমাতে পারেনি,ঘুম আসেনি।নীলাঞ্জন ফোন স্ক্রিন অফ করে চুপচাপ নাইট ল্যাম্প এর দিকে তাকিয়ে থাকল।এভাবেই নাইট ল্যাম্প গুলো প্রত্যেকের ঘরে জ্বলে প্রতিদিন ,শুধু রাত এর জন্যেই।একটু সকাল হলেই নাইট ল্যাম্প এর সুইচ এ হাত চলে যায় বাড়ির মালিক এর। নীলাঞ্জন নিজেও কি এরকমই ? অন্ধকার সময় মানুষ তাকে ব্যবহার করে,আলোর সময় নিভিয়ে দ্যায়। শুধু নীলাঞ্জন কেন অনেকের ক্ষেত্রেই তাই। নীলাঞ্জন এর খানিকটা মুড অফ হয়ে যায়।আবার শুয়ে পড়ে। মিনিট পাঁচেক এপাশ ওপাশ করে উঠে বসে, তারপর কি যেন ভেবে একলাই বেরিয়ে যায়।ঝুম কে একটা এস এম এস করে দ্যায়,"যাবি না যখন কাল কে বললেই পারতি,তাহলে আর ফোন করতাম না,একাই বেরোলাম।" হতে পারে অভিমান টা একটু হালকা হল।বাইরে তখন আঁটোসাঁটো কুয়াশা চেপে ধরেছে সব কিছু কে।গলির মুখে যেতেই একটা পুকুর দেখা যায় , পিচরাস্তার ওপারে।জল এর উপরিভাগে একটা স্বচ্ছ ঝাপসা স্তর পড়ে আছে।একটা ঢিল ছুড়লে সেই জল পৃথিবীর ওপর দারুন অভিমান করবে, দেখেই মনে হচ্ছে। নীলাঞ্জন এর অভিমান টা ও তেমন ই।
নীলাঞ্জন এগোতে থাকে, বড় রাস্তার দিকে।দুয়েকজন ফুল তুলতে ব্যস্ত এর ওর বাগানে।রাস্তা টা ভিজে রয়েছে।গত রাত এর বৃষ্টি টা অমায়িক ছিল।একটু এগিয়ে একটা বড় মাঠ,তার গা ঘেঁষে একটা লাল বাড়ি,একটা বট গাছ,একটা ছোট্ট ঝিল,দুটো ধবধবে সাদা হাঁস গা ঠেকিয়ে এক কোণে চুপ করে ভেসে আছে মাথা নিচু করে।কুয়াশা তে সমস্ত টা নীলাঞ্জন এর কাছে অচেনা মনে হচ্ছে। ঝিল এর পাশ দিয়ে যেতেই একটা সোনালী মথ কে জল এর ওপর ছট্ফট্ করতে দেখে নীলাঞ্জন হাত এ করে তুলে একটা শ্যাওলা ভরা পাঁচিল এর ওপর বসিয়ে দ্যায়। হাঁটতে হাঁটতে ভাবতে থাকে ওর প্রিয়জন নিশ্চই ওকে খুঁজছে এতক্ষণে,খুব ভয় পেয়েছে আর হয়ত ঝিল এর ধারে কাছেই আসবেনা কোনোদিন,সবসময় তো নীলাঞ্জন থাকবে না ,তখন কে বাঁচাবে ওকে! নিশ্চই কেউ বাঁচাবে ঠিকই।চারদিকে এত মানুষ আছে।নীলাঞ্জন মাথা তুলে দেখল কোনো মানুষ সেই মুহূর্তে নেই,ও একলাই হাঁটছে,আর কুয়াশা।ওপর দিকে তাকিয়ে দেখল ইলেকট্রিক তার গুলো ও কুয়াশা তে জড়িয়ে রয়েছে,আবছা।কোত্থেকে একটা ফিঙে উরে এসে সেই তার এর স্থিরতা ভেঙে দিল।এভাবেই আমরা ও অনেক মানুষ এর নিজেদের স্থিরতা ভাঙি।অনেকটা উপর দিয়ে যথাসম্ভব একটা বিরাট চিল উড়ে গেল ধীর গতিতে কুয়াশা টা কাটতে কাটতে।হঠাৎ ঝুম এর ওপর রাগ হল একটু।ও সাথে থাকলে এই সাধারণ তবুও অসাধারণ মুহূর্ত টা,এই ছবি টা ভাগাভাগি করে নেওয়া যেত।ঝুম বোঝে,ঝুম জানে বিদেশি কবি দের নাম,ও তাদের লেখা পড়ে।ও নীলাঞ্জন এর লেখাও পড়ে।নীলাঞ্জন শুধু অন্ধের মতো লিখতেই থাকে কুয়াশা কাটতে কাটতে,যেভাবে চিল টা  উড়ে  গেল একটু আগে ওর ই মাথার উপর দিয়ে।এবার ভাবনা টা কে সরিয়ে দিল নীলাঞ্জন।হাঁটতে থাকল।
চা এর দোকান এর সামনে একটা ছোট্ট হনুমান মন্দির আছে ,সেখানে একজন বৃদ্ধ শুয়ে আছে অর্ধেক শরীর রাস্তায়,পাশে দেশি মদ এর খালি বোতল ।এই লোক টা কি শুধুই মাতাল? কেন মাতাল,কেন নেশা করে বাইরে পড়ে আছে এভাবে! কেউ খুঁজতে আসবে না! বাড়ি কখন যাবে!একদিন এভাবেই মারা যাবে? কোনদিন হয়ত আর উঠবেই না,সেটা আজ ও হতে পারে।ভাবতেই নীলাঞ্জন নিজেকে দেখতে পেল কিভাবে যেন ঐ বৃদ্ধের ভিতর।সরে গেল সেখান থেকে।সিড়ি দিয়ে নেমে জল এর কাছাকাছি গেল নীলাঞ্জন।গঙ্গাস্নান এ ডুব সেরে অর্ধেকটা উঠেছে ফ্যাকাসে কমলা রং এর একটা গোল বল। আকাশ এর রঙ টা কে এই মুহূর্তে কি নাম দেওয়া যায় সেটা ভাবতে ভাবতে দুটো হাঁটুর উপর হাত দুটো রেখে মাথা টা নিচু করে নিল।চারপাশে কয়েক টা কাক এর আত্মবিলাপ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই।
©অঞ্জন ঘোষ রায়।     (পরবর্তী আসছে)

শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৯

Nilanjan kothay? 1_ ©Anjan Ghosh Roy _ 2019

© অঞ্জন ঘোষ রায়







নীলাঞ্জন কোথায় ? (১)
নীলাঞ্জন বসে আছে হাঁটু মুড়ে। ভাত এর থালা নিয়ে রান্নাঘর এর মেঝে তে বসে আছে অনেকক্ষন। অর্ধেকটা ভাত সাদা, শুকনো।অর্ধেকটা এলোমেলো ভাবে লালচে ঝোল এ মেখে রয়েছে।আর কিছুই প্রায় নেই থালায়।মেঝে তে যে কটা ভাত এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে,সেগুলো দিব্যি পিপড়ের রাজধানী থেকে সেনাবাহিনী এসে বেশ দায়িত্ব সহকারে নিয়ে যাচ্ছে।নীলাঞ্জন ঠায় বসে থেকে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।ভাবছে এদের সাথে তার হয়তো কোনো যোগসূত্র আছে।এভাবেই নীলাঞ্জন মুখে করে এত বড়বড় ভাত নিয়ে যাবে কখনো।তখন ও নিজে  পিপড়ে দের দলে সর্দার হবে।যদিও তখন জানবে না ও যে ওই খাদ্য বস্তুটির নাম ভাত।
পিছন এর দেওয়ালে ঘড়ি টা টিক টিক শব্দ করছে ,দুপুর টা কে আরো নিস্তব্ধ করে দিয়েছে।পিপড়ে দের নিয়ে উদ্ভট কথা ভাবতে ভাবতে মাথা তুলে রান্নাঘর এর জানলার ওপারে চোখ রাখে নীলাঞ্জন।মেহগনি পাতা গুলো ঝরে গেছে এতদিন ধরে,এখন সদ্য গজিয়ে ছে নতুন পাতা,হালকা লাল লাল। কয়েকদিন বাদেই বিভৎস ভাবে সবুজ হয়ে যাবে মেহগনি গাছ টা। নীলাঞ্জন তখন ও এভাবে তাকিয়ে থাকবে।এরকম দুপুর আবারো আসবে।সত্যি ই আসবে? যদি না আসে! এসব ভাবতে ভাবতেই অনেকটা দুর থেকে ঘুঘুর ডাক কানে এলো নীলাঞ্জন এর।বড্ড বিষন্ন লাগছে দুপুর টা কে এবার।আরো নিস্তব্ধ লাগছে। কোনো নির্জন জঙ্গলের প্রাচীন গাছ এর শিকড় এর শেষ প্রান্তে যতটা নিস্তব্ধতা থাকে ,ততটা নিস্তব্ধ।
নীলাঞ্জন এর মনে পড়ে যায়,ছেলেবেলায় এরকম হালকা দুপুরে স্কুল মাঠ এর এক পাশে অশ্বত্থ গাছ এর ছায়া তে, কচি ঘাস এর কার্পেট এর মতো একটু জায়গা ছিল। সেখানে আসলে খুব একটা কারো পা পড়ত না বলেই অমন যত্ন করা ঘাস ছিল।কোনমতে দুপুরের খাওয়ার পরেই দৌড়ে ওখানে।ওটা স্থায়ী ঠিকানা ছিল নীলাঞ্জন এর যতক্ষণ না দুপুর গড়িয়ে বিকেল হোত। সটান হয়ে শুয়ে পড়ত ঘাস এর ওপর,পাতা গুলো হাওয়া তে তিরতির করে কাঁপত,তার ফাঁক দিয়ে আকাশ এর টুকরো।আরেকদিকে গোটা আকাশ এ পাক খাওয়া চিল।ওখান থেকেই স্কুল এর পিছনের ওয়াটার ট্যাঙ্কির মাথা টা দেখা যেত। চিল উড়ে এসে বসত,আর কাক গুলো ওকে জ্বালাতন করত বারবার।নীলাঞ্জন এর বিরক্তি হত।কপালে বিরক্তির দের দুখানা ভাঁজ নিয়ে উঠে বসত।মন খারাপ হয়ে যেত ওর।মাথা নামিয়ে ঘাস এর দিকে তাকিয়ে দেখত,ছোট ছোট নীল ফুল এদিক ওদিকে ।থুতনি টা ঘাসে ঠেকিয়ে চোখ সমান্তরালে রেখে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকত অনেকক্ষন।বিকেল হলে হইচই শুরু হলে,ওর বয়সি বাচ্চারা খেলতে আসলে একে একে,নীলাঞ্জন সেখান থেকে উঠে যেত। ঘরে চলে যেত।কাঠ এর বড় জানলার পাশে বসে নারকেল গাছ এ কাক এর বাসার দিকে তাকিয়ে থাকত।
নীলাঞ্জন এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ বাস্তবে ফিরে এলো। ভাত এর দিকে তাকিয়ে থাকল কয়েক সেকেন্ড। থালা টা তুলে নিয়ে কল পারে গিয়ে এক কোণে ভাত গুলো উপুড় করে দিল। কেউ ঠিক এসে খেতে শুরু করে দেবে পরে।নীলাঞ্জন হাত ধুয়ে মুছে এসে খাট এ শুয়ে পড়ল বালিশ টা কে বুকে নিয়ে।চোখ বন্ধ করে  জেগে থাকতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল কিছুক্ষন এর মধ্যেই।দুপুর ততক্ষণ এ বিকেল হয়ে গেছে।বেশ কত গুলো কোকিল ডাকাডাকি করছে অনবরত অনেকটা দূরে ,কোনো গাছে কচি পাতার মিছিল এর ভিতর, আড়ালে।
©অঞ্জন ঘোষ রায়
#anjanghoshroy

কবি এবং কেরানী কবি

মহৎ কবি কখনো ডায়েরি লিখবেন না, এটা আপনাকে বুঝতে হবে। তার জীবন কোন সময়ের ভাংচুর এর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে নাকি সুখের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে,কবি যদি...